স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম: একটি স্মার্ট সমাধান - Berger Home Diaries
parallax background

স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম: একটি স্মার্ট সমাধান

By Tasnim Jarin

ঘর সাজাতে আমাদের পরিকল্পনার যেন কোন শেষ নেই। কম খরচে কিন্তু শৌখিনতার সাথে ঘরের ভিতরের এবং বাইরের সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রতিনিয়তই আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন সব সমাধান। আর এরকমই একটি প্রযুক্তি হলো ‘স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম’।

ভুলবশত রুমের লাইট-ফ্যান বন্ধ না করেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, কোন চিন্তা নেই! স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম আপনার জন্য সেই কাজটিও করে দিবে। 

ঘর আলোকিত করতে নিত্যনতুন সব প্রযুক্তি আপনার ঘরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে। স্মার্টনেস এখন আর শুধু মুঠোফোন, টিভি কিংবা ল্যাপটপে সীমাবদ্ধ নয়; বাড়িঘরের সৌন্দর্যও যে আজ স্মার্ট সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত! স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম আপনার ঘরের আবহকে আরও মোহনীয় এবং উপযোগী করে তুলবে আর এর সাথে আপনার সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রকাশ তো থাকছেই!

স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমে ঘরের প্রতিটি কোণ আলোকিত

স্মার্ট হোমের অত্যন্ত উপযোগী একটি অংশ স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম, যেখানে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ডিভাইসগুলো ঘরের লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবে। আর তাই ঘরে স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম থাকলে আপনি যেসব সুবিধাগুলো পাবেন-

১। অন্ধকার রুমে প্রবেশের সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘরে আলো জ্বলে উঠবে।
২। ইনকামিং কল আসলে এই আলো আপনাকে সংকেত দিবে।
৩। প্রয়োজন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রুমের আলো কমবে অথবা বাড়বে।
৪। ভুলবশত রুমের লাইট-ফ্যান বন্ধ না করেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, কোন চিন্তা নেই! স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম আপনার জন্য সেই কাজটিও করে দিবে। 

অন্ধকার রুমে লাল-নীল আলোক রশ্মি

উন্নত বিশ্বে যদিও এই সিস্টেম অনেক আগে থেকেই আছে। তবে আমাদের দেশে এর ব্যবহার এখনও ততটা কার্যকরী হয়নি। স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম সাধারণত একটি সফটওয়্যার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা রিমোট কন্ট্রোল বা ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অনেকক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও লাইটিং নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হয়। যদিও বর্তমানে অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি এমন অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবস্থা রেখেছে যে ফোন থেকে খুব সহজেই আপনি এসির তাপমাত্রা কন্ট্রোল করতে পারবেন, ফলে রিমোট হারিয়ে গেলেও আপনি তেমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হবেন না।

তবে বর্তমানে আমাদের দেশে যে লাইটিং সিস্টেমগুলো অনেক বেশি পরিচিত এবং যা আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে করে তুলবে দ্বিগুণ তা হলো-

পেনডেন্ট বা অ্যাকসেন্ট লাইটিং সিস্টেম- সাধারণ এলইডি লাইট ঘরের প্রতিটি কোণে আলো পৌঁছে দিতে না পারলেও, অ্যাকসেন্ট লাইট রুমের বিশেষ জায়গায় ফোকাস লাইট হিসেবে কাজ করে। যেমন: প্রতিটি সিঁড়ির নিচে এই লাইটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যা দেখতে দারুণ সুন্দর দেখাবে।

এছাড়া গ্লোবের মতো বা লম্বাটে পেনডেন্ট ধাঁচের লাইট সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিলেও তা দেখতে বেশ সুন্দর দেখায়। এক্ষেত্রে রুমের আকৃতি এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝে লাইটের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। শোবার ঘর, ড্রইং রুম কিংবা রান্নাঘরের কাউন্টারটপে এই লাইট লাগানো যেতে পারে।

দেয়ালে পেনডেন্ট লাইটের হলদে আলোর আভা

অ্যাকসেন্ট লাইটিং ছাড়া আরও রয়েছে টাস্ক এবং জেনারেল লাইটিং। জেনারেল লাইটগুলো সাধারণত টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প, সিলিং লাইট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ড্রেসিং টেবিলের উপর ড্রইংরুমের কর্নারের জন্য রয়েছে- ‘স্পট লাইট’, ‘এলইডি ওয়াল ব্রাকেট’; অন্যদিকে লিভিংরুম আর বেডরুমের জন্য ‘ফোকাস লাইট’, ‘লেইস লাইট’-এর মতো এক্সসাইটিং কিছু লাইটিং সিস্টেম তো থাকছেই, যা রুমের চেহারাই পাল্টে দিতে প্রস্তুত!

ক্ল্যাসিক ধাঁচের এই ছবিটি ল্যাম্পের আলোয় আলোকিত

স্মার্ট লাইটের দাম কত? কোথায় পাবো? 

আকার, আকৃতি এবং ডিজাইন ভেদে স্মার্ট লাইট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। শুধু তাই-ই নয়, আপনি কী কারণে এই লাইটটি ব্যবহার করছেন, তার উপরও নির্ভর করবে যে আপনি কোন জায়গার জন্য কোন লাইটটি বেছে নিবেন।

প্রথমেই আসি স্ট্রাইপ লাইটের কথায়, এই লাইট এক রঙেরও যেমন হয়ে থাকে, তেমনি একই স্ট্রাইপে ৩-৫টি ভিন্ন রঙেরও হয়ে থাকে। এই লাইটের দাম করা হয় মিটার হিসেবে। মিটার প্রতি এর দাম শুরু হয় ১৩০ টাকা থেকে। একটা নির্দিষ্ট রঙের হলে মিটার প্রতি খুচরা দরে ১০০ টাকায় কিনতে পারবেন।

তো আপনি যত মিটার নিবেন, সেই হিসেবে এর দাম করা হবে। তবে আপনি যদি একই স্ট্রাইপে বিভিন্ন রঙের লাইট চান, সেক্ষেত্রে দাম ১৩০ থেকে শুরু হবে। স্ট্রাইপ লাইট জ্বালানোর জন্য সাথে থাকে একটি রিমোট। যদি আপনি একের অধিক রঙ চান তবে, রিমোটের সাথে একটি কানেক্টরও কিনতে হবে। কানেক্টরের দাম পড়বে ৩৫০ টাকা, যার মাধ্যমে রিমোটে থাকা ১৫টি রঙের আলো আপনি ইচ্ছামতো জ্বালাতে পারবেন। 

এছাড়া দেয়াল, পড়ার টেবিল, শেলফ কিংবা জানালার পাশ সাজাতে কিনতে পারেন ডেকোরেশন’স লাইট। দোকানে গেলে এই লাইটগুলো আপনি বিভিন্ন ধরনের দেখতে পাবেন, তবে কিনতে হবে আপনি কোথায় সাজাবেন সেই প্রয়োজন অনুসারে। এই লাইটগুলোর দাম ১৫০ থেকে শুরু হয়ে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।

এবার আসি সিলিং লাইটের কথায়, এই লাইটটি দুই ধরনের পাওয়া যায়। যদি এক কালারের হয় তবে ওয়ারেন্টিসহ, আর মাল্টি কালারের হলে ওয়ারেন্টি ছাড়া। ওয়ারেন্টিসহ দাম পড়বে ৫৫০ আর ওয়ারেন্টি ছাড়া ৪৫০ টাকা। যদিও ডিজাইন এবং আকারভেদে দামের তারতম্য দেখা যাবে। এছাড়া একই ধরনের এলইডি লাইট যদি ডাবল কালারের হয়ে থাকে, তবে ওয়ারেন্টিসহ দাম ৪৫০ থেকে ৮০০ এর মধ্যে পাওয়া যাবে।

স্মার্ট গার্ডেন লাইট

বাড়ির সামনের ছোট্ট ছিমছাম বাগানের জন্যও রয়েছে বিশেষ কিছু স্মার্ট গার্ডেন লাইট, যার নিয়ন্ত্রণ আপনি ঘরে বসে রিমোট দিয়েই করতে পারবেন। এমনকি এই লাইটগুলো ওয়াটারপ্রুফও বটে। ঝুম বৃষ্টিতেও আপনি দিব্যি আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারবেন। এ ধরনের লাইটের দাম ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে, যা রিমোটে থাকা ১৬টি রঙের আলোয় ভিন্ন রূপ নিতে সক্ষম।

এছাড়া আরেক ধরনের লাইট হলো ‘ফোকাস লাইট’, যা ‘পেনডেন্ট বা অ্যাকসেন্ট লাইট’ নামেও পরিচিত। এই লাইটগুলো দেখতে এতটাই সুন্দর যে, জ্বালানোর সাথে সাথে মুহূর্তের মধ্যে আপনার রুমের আবহই পাল্টে যাবে। এই লাইটগুলো অনেক ধরনের ডিজাইনে পাওয়া যায়, যার দাম ৭০০ থেকে শুরু করে ১৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে, হোল্ডারে থাকা হ্যাঙ্গিং লাইট পাওয়া যায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। এ ধরনের লাইটে হোল্ডার একবার সেট করে ফেলার পর, শুধুমাত্র লাইট চেঞ্জ করেও আপনি দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।

উপরে উল্লেখিত স্মার্ট লাইটগুলো আপনি পাবেন ঢাকার চকবাজার, গুলিস্তান, গুলশান, খিলগাঁও, ফার্মগেটসহ, নিউমার্কেট এলাকায়। তবে যদি আপনি খুচরা মূল্যে কিনতে চান, তবে অবশ্যই হাতে কিছুটা সময় নিয়ে চকবাজার কিংবা গুলিস্তানের স্টেডিয়াম চত্বরে চলে যেতে পারেন। এখানে আপনি লাইটের অনেক দোকান পাবেন। এছাড়া পান্থপথ, মিরপুর, বসুন্ধরা সিটিসহ ঢাকার অন্যান্য মার্কেটেও পাবেন, যদিও দামটা একটু বেশি পড়বে আর এত কালেকশনও পাবেন না।  

স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের অসুবিধা সমূহ- সুবিধার সাথে সাথে স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

১। যেহেতু স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ রিমোটচালিত হয়ে থাকে, তাই প্রত্যেকটি লাইট একটি কেন্দ্রীয় সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি লাইট একই ধরনের হতে হবে। লাইটের ভার্শন এবং ওয়াটও একই হতে হবে। নতুবা সিস্টেমের পক্ষে সংকেত পরিচালনা সম্ভব হবে না, ফলাফল লাইটও জ্বলবে না।

২। স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের আরেকটি বড় সমস্যা হলো এর ক্ষণস্থায়ী জীবন! জ্বি, মানুষের জীবনের মতো স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের জীবনও বেশ ভঙ্গুর। যেহেতু এ ধরনের লাইটগুলো বেশ হালকা ধরনের হয়ে থাকে, তাই অতিরিক্ত ভোল্টেজে এবং এর কমপ্লেক্স সিস্টেমের কারণে লাইফটাইম খুবই কম পায়। যদিও বেশিরভাগ লাইটের সাথে ওয়ারেন্টি কার্ড দিয়ে দেওয়া হয়, তাই অল্প সময়ের মধ্যে অকেজো হয়ে গেলে, নতুন একটা রিপ্লেস পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

৩। ফোনে যেভাবে সফটওয়্যার আপডেট দেওয়া হয়, স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে সিস্টেম আপ-টু-ডেট রাখতে হয়। অন্যথায় সিস্টেমে ঝামেলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেখতে দারুণ হলেও, স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম পরিচালনা বেশ সময়সাপেক্ষও বলা চলে!

৪। স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের মতো প্রযুক্তি নিয়ে যদি আপনার ধারণা কম থেকে থাকে, তবে বাসায় এর ব্যবহার নিঃসন্দেহে বেশ ব্যয়বহুল হবে। কেননা ইন্সটলেশন প্রসেস থেকে শুরু করে সফটওয়্যার আপডেট প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনার একজন এক্সপার্ট এর দরকার পড়বে। যেখানে সীমাহীন খরচ তো থাকছেই!

৫। স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের সবচেয়ে বড় বাধা হলো, আপনি চাইলেই এর স্থান পরিবর্তন করতে পারবেন না। আর যদি করতেই হয়, তবে সেক্ষেত্রে প্রথমে স্মার্ট বাল্বগুলোর বদলে সেখানে নরমাল বাল্ব লাগাতে হবে। অতঃপর পরবর্তী বাসা বা রুম স্মার্ট লাইটিং সিস্টেমের জন্য প্রস্তুত করে, সিস্টেম ইন্সটল করে, বাল্বগুলোকে আবার জায়গামতো বসাতে হবে।

কি, একটু ঝামেলাপূর্ণ কাজ মনে হচ্ছে তো? ঝামেলা তো রয়েছেই, তবে সৌন্দর্যের সামনে কোন কিছুই যেন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না! প্ল্যানটা একটু বুঝেশুনে, ঠিকমতো অংক কষে করলেই আর কোন ঝামেলাকেই ঝামেলা মনে হবে না। তবে আর দেরি কেন? পছন্দমতো লাইট কিনে আপনার সাজানো ঘরটিকে আলোকিত করার সময় যে এখনই! 

  •  
  •  
  •  
  •   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *