By Tasnim Jarin
“আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,
আহা আজি এ বসন্তে…”
হিমশীতল আবহাওয়ার আবেশ কাটিয়ে প্রকৃতি যখন নতুন একরূপে জেগে উঠে তখন শীতে শুকিয়ে যাওয়া গাছের ডালপালায় আবার নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়। ফুলেফুলে ভরে যায় চারপাশ। বিগত সময়ের গল্প ভুলে প্রকৃতি যেন বসে নতুন কোন কাব্য রচনায়। আর সে কাব্য রচনায় যোগ হয় পাখির কলতান, হাজার রঙের মেলা। ঋতুভেদে প্রকৃতির এই পরিবর্তনে শীতের শেষে জায়গা করে নেয় বসন্ত, যাকে আমরা ফাল্গুন মাস নামে জানি।
তো এতশত রঙের মাঝে ফাল্গুন মাসে হলুদ রঙকে কেন এত প্রাধান্য দেওয়া হয়, তা কি আমরা জানি? ফাল্গুন মাসে প্রকৃতির মাঝে যে পরিবর্তন আসে তা মূলত এর রঙে ও রূপে। রাশি রাশি সবুজ পাতার ভিড়ে থাকে হলুদ, কমলা, লাল, সাদা এবং গোলাপি ফুলের ছড়াছড়ি। তবে এর মধ্যে হলুদ, লালচে কমলা, হলদে-সাদা এবং লাল রঙের ফুলের আনাগোনা যেন বেশি থাকে। আর তাই হয়তো বসন্ত কিংবা ফাল্গুনে অন্য রঙের তুলনায় হলুদ রঙটি বেশি প্রাধান্য পায়।
ফাল্গুনে প্রকৃতি রাঙাতে হাজির হয় সোনালু, জুঁই, বকুল, মাধবীলতা, পলাশ, মাধুরীলতা, কাঠচাঁপা, করবী, কনকলতা, মুচুকুন্দ, কনকচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, শিমুল, পারিজাত, টগর ইত্যাদি ফুল। আর এ ফুলগুলোর বেশিরভাগের মধ্যেই রয়েছে হলুদ রঙের ছোঁয়া। তাই তো ফাল্গুনে প্রকৃতি সাজে হলদে পাখির সাজে।
শুধু কি ফুল আর প্রকৃতি? বসন্তের প্রথমদিন প্রকৃতির পাশাপাশি হলদে রঙের সাজে দেখা যায় ছোট থেকে বড় সবাইকে। হলুদ রঙের শাড়ি, কিংবা কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি হিমুর বেশে হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরে বসন্ত উদযাপনে যেন কোন কমতি থাকে না। আর এর সাথে থাকা চাই ফুলের মালা, টিয়ারা, হাতের কব্জিতে থাকা ফুলের বালা। এসবই যেন প্রকৃতির সাথে মিলে প্রকৃতির অংশ হয়ে যাওয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। আর ফুলের পাশাপাশি থাকে হাতভর্তি চুড়ি। তবে এ সাজ যে শুধুমাত্র হলুদ রঙের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে, তা কিন্তু নয়। বরং হলুদের পাশাপাশি কমলা, হলদে সাদা, সবুজের দেখাও মিলে সাজে এবং পোশাকে।
তবে হলুদ এই রঙটি কিন্তু কোনও মৌলিক রঙ নয়। হলুদ রঙটিকে ধরা হয় কমলা আর সবুজ রঙের মাঝামাঝি রঙ। হেমন্তের পাতার রঙ, ভুট্টার গায়ের রঙ, ড্যাফোডিল ফুল, সূর্যমুখী, ডিমের কুসুম, কলার খোসা, পাকা লেবু কিংবা সূর্যের আলো; হলুদ রঙটির সৌন্দর্য আর উজ্জ্বলতা যেন ভিন্নমাত্রা ধারণ করে যেকোনো রূপে। বিভিন্ন রূপে হলুদ রঙটি হাজির হয় বিভিন্ন শেডের মধ্য দিয়ে। বাদামী ঘরানার এই রঙটির রয়েছে হালকা এবং গাঢ় বিভিন্ন শেড। খুব সহজে বাসন্তী, হালকা হলুদ, সরষে হলুদ রঙ চিনলেও, এর বাইরেও হলুদ রঙটির রয়েছে গোল্ড, লেমন, ক্যানারি, ড্যাফোডিল, বাটার, মাস্টার্ড, ফায়ার, বাটারস্কচ, হানি, ব্লন্ড এবং পাইনঅ্যাপল ইত্যাদি বিভিন্ন শেড। ফুল এবং খাবারের নামে পরিচিত এ শেডগুলো হলুদ রঙেরই বিভিন্ন রূপ মাত্র।
ফাল্গুন বা বসন্তে প্রকৃতি যেমন তার রূপ বদলাতে থাকে, তেমনি অন্দরমহলের দেয়াল জুড়েও যদি রাখতে চান বসন্তের ছোঁয়া, তবে লিংকে ক্লিক করে জেনে নিন এর বিস্তারিত। প্রকৃতির মাঝে ফাল্গুনে থাকে ফুলের সমাবেশ, আর সেই সাথে ঘরের দেয়াল সাজাতে যেকোনো ফ্লোরাল থিম ইল্যুশন হবে ঘরের দেয়ালের জন্য বিশেষ সাজ। এক্ষেত্রে হালকা কিংবা গাঢ় হলুদের যেকোনো শেডেই সাজিয়ে নিতে পারেন ঘরের ভিতরটা।
সময় এবং নদীর স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি প্রকৃতির মাঝে ফুল ফোটা শুরু হোক বা না হোক, পঞ্জিকার পাতায় মাঘের শীত শেষে ফাল্গুনের আগমনও হয়ে যাবে ঠিক সময়মতো। আর তাই তো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো করেই বলতে হয়, “ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত”। পঞ্জিকার পাতা থেকে শীত বিদায় জানানো মাত্রই বসন্তের দেখা মিলে। প্রকৃতির এই পালাবদলে ফুল ফোটায় দেরি হলেও ফাল্গুনের উৎসব উদযাপনে কোনও বিলম্ব চলবে না। তাই প্রস্তুতিও থাকা চাই আগেভাগেই। ফাল্গুনের রঙে রঙিন হয়ে উঠুক প্রকৃতি এবং মানুষ, বসন্ত ভালো কাটুক!