লাল-সাদায় বৈশাখ হোক রঙিন - Berger Home Diaries
parallax background

লাল-সাদায় বৈশাখ হোক রঙিন

by Tasnim Jarin

“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক
এসো এসো…”

উৎসব মানেই যেন রঙের মিলন মেলা। বলছি বাঙালির উৎসবের দিনগুলোর কথা, যেখানে প্রতিটি উৎসবই যেন একেকটি রঙের অর্থ বহন করে। উৎসবের চিত্রপটে আঁকা সেসব রঙিন দিনগুলো সাজে বিভিন্ন রঙ আর বর্ণে। তেমনই এক উৎসব বৈশাখ। বৈশাখের প্রথমদিন অর্থাৎ, পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে তাই সবাই সেজেগুজে প্রস্তুতি নেয় বৈশাখকে বরণ করে নিতে। পঞ্জিকার পাতায় যাত্রা শুরু করে নতুন একটি সংখ্যা, নতুন একটি বছর।

সময়ের পালাক্রমে উৎসব আয়োজনে নানা পরিবর্তন আসলেও প্রথাগত কিছু নিয়ম আমরা বরাবরের মতোই অনুসরণ করে থাকি। হোক সে নিয়ম পোশাকের, রীতিনীতির কিংবা রঙের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দিনটি যেন হয়ে ওঠে সবার। এক্ষেত্রে বৈশাখের কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে যে দুইটি রঙ সবার প্রথম ভেসে ওঠে, তা হলো লাল আর সাদা। চিরায়ত বৈশাখের রঙ হিসেবে খ্যাত এই দুইটি রঙের যোগসূত্রই যেন বহন করে বৈশাখী আমেজ।

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে বৈশাখের জন্য আমাদের প্রস্তুতিও থাকে তাই একটু ভিন্ন। অন্দরসজ্জা থেকে শুরু করে পোশাক তৈরি প্রত্যেকটি জায়গাতেই থাকা চাই লাল-সাদার ছোঁয়া। তবে এত রঙ থাকতে এই দুইটি রঙ কেন বৈশাখের রঙ হিসেবে পরিচিতি পেলো, তার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত।

বৈশাখের অন্যতম ঐতিহ্য হলো নতুন হালখাতা খোলা। যা লাল মোড়কে বাঁধা সাদা কাগজের হিসাব রাখার একটি খাতা। নতুন এই খাতাতে হিসাব রাখা শুরু হয় বাংলা বছরের প্রথমদিন থেকে। পুরানো সব ভুলে গিয়ে এ এক নতুন যাত্রা।

অন্যদিকে আরও কয়েক বর্ষ আগে মুঘল আমলে যখন রাজা-বাদশাহদের খাজনা দেয়া হতো, তা লাল কাপড়ে বাঁধা থাকতো। আর খাজনা দেয়ার সেই দিনটিও যে ছিল বাংলা নতুন বছরের প্রথমদিন। আর পূজা-পার্বণে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরার প্রচলন যে অনেক পুরানো। তাই বলতেই হয় বর্ষবরণে লাল রঙের এই ঐতিহ্য বহু পুরানো। অন্যদিকে সাদা রঙটি যে শুভ্রতা, স্বচ্ছতা আর শান্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তাই তো শক্তি আর শান্তির বার্তা যেন নতুন বছরে প্রতিটি ঘরে ঘরে বয়ে আনে আনন্দ তারই প্রার্থনা থাকে বৈশাখের আগমনে, “মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা”। 

বৈশাখের এই  রঙ তাই শুধু প্রকৃতিতেই নয়, অন্দরেও এর প্রভাব ফেলে। যদিও বৈশাখ মানেই লাল-সাদার আমেজ, তবে দিনবদলের সাথে সাথে এই রঙেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। লাল-সাদার পাশাপাশি এখন সবুজ, নীল, কমলা, বেগুনী ইত্যাদি আরও অনেক রঙই যেন পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে। কেননা, উৎসবের আনন্দ যে কোন নির্দিষ্ট রঙে আটকে থাকে না। পোশাক থেকে শুরু করে ঘরের আলপনা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গাতেই থাকে জীবনের নানা রঙ।

আর এর সাথে যুক্ত হয় প্রকৃতির দারুণ সব ফুল। ড্রইংরুম কিংবা লিভিং রুমের টেবিলের কাঁচের ফুলদানিতে তাই শোভা পায় দারুণ দেখতে এই ফুলগুলো। সাথে সন্ধ্যার নিভু নিভু আলোর সাথে প্রদীপের উজ্জ্বলতা যেন বছরের আগমনকে আরও বিশেষ করে তুলে। এক্ষেত্রে ঐতিহ্য ধরে রাখতে লাল-সাদার পাশাপাশি অন্য রঙেও আলপনা করে নিতে পারেন ঘরের বিশেষ কিছু কোণে।

বৈশাখে আবার কোনো কোনো বাড়িতে ঢোকার মুখে কিছুটা জায়গায় লালা-সাদা রঙে বৃত্তাকার আলপনা করা হতো। অশুভকে বিদায় জানিয়ে নতুনের আগমনের অপেক্ষায় বোধ হয় এই আয়োজন করা হতো। বৃত্তাকার আলপনার চারপাশে টুকটুকে লাল পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া হতো। কালের বিবর্তনে এবং সময়ের অভাবে আলপনা হারিয়ে যেতে থাকলেও আলপনার কদর কিন্তু কমেনি এতটুকুও।

লাল-সাদা হোক বা না হোক, বৈশাখের আগমন মানেই যেন রঙিন। বৈশাখের এই রঙ রাঙিয়ে দিক সবার মনে নতুন এক আশার বার্তা, নতুন কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েই শুভ সূচনা হোক নতুন একটি বছরের।

  •  
  •  
  •  
  •   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *