by Tasnim Jarin
“আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ”
বিশাল আকাশের মাঝে উড়তে থাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্তের পতাকাটিই বলে দেয় এই উল্লাস আর এই চিৎকার আনন্দের। এই আনন্দ বিজয়ের। এই বিজয় লাখো মুক্তিযোদ্ধার নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবদানের প্রতীক, যা জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরে।
লাল–সবুজ রঙে আঁকা ৫৭৩২০ বর্গমাইলের এই দেশের পতাকাটি যেন তারুণ্য আর বীরত্বের এক অনন্য চিত্র। গাঢ় সবুজের মাঝে উদীয়মান লাল বৃত্তটি মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বীর সৈনিকদের সাহসিকতার কথা, রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার কথা। আর গাঢ় সবুজ, এ যেন বাংলার সবুজ প্রান্ত, যেখানে লাল-সবুজ পতাকা হাতে ছুটে চলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিজয়ের উল্লাস।
বিজয়ের এই উল্লাসে লাল-সবুজ শুধুমাত্র দুইটি রঙই নয়, এ যেন অনুভূতির আরেক নাম। আপনি মানচিত্রের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, বিজয়ের এই দিনে পতাকার লাল-সবুজ রঙ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের কথা, অনুভূতির কথা এবং সীমাহীন আত্মত্যাগের কথা। ব্যাপারটা এমন যেন, বাংলা শব্দটার সাথেই লাল এবং সবুজ রঙ দুইটি জড়িত। পতাকায় এই দুইটি রঙ ছাড়া অন্য কোনো রঙ যেন কল্পনাতেও ভাবা যায় না। আর তাই আকাশের বিশালতার মাঝে জায়গা করে নেয়া ১০:৬ অনুপাতের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটি আমাদের বিজয়ের এবং গর্বের প্রতীক। আর বিজয়ের রঙ? সে তো নিঃসন্দেহে লাল এবং সবুজ। জাতীয় পতাকার মাঝে থাকা লাল বৃত্তটি ডিজাইন করার সময় তা একপাশে একটু চাপানো হয়েছে। আর এর পেছনের কারণটি ছিল পতাকা যখন উড়বে, তখন যেন এই বৃত্তটি পতাকার মাঝ বরাবর দেখা যায়।
জাতি হিসেবে গর্বের এই দিনটি অর্থাৎ, ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। অবিচারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে বিজয় উদযাপনের এই দিনে তাই প্রস্তুতিও থাকে ভিন্ন। অন্দর থেকে লোকালয় সব জায়গায় যেন একই সুর, একই রঙ। ঘরের বারান্দা থেকে শুরু করে সুউচ্চ দালানের উপর, এমনকি ছোট থেকে বড়; লাল-সবুজের সাজে সবাই যেন একসাথে প্রস্তুত। বাবার কাঁধে চড়ে বেড়াতে যাওয়া শিশুটির গালে রঙ-তুলির আঁচড়ে আঁকা সবুজের মাঝে লাল বৃত্তের আমাদের জাতীয় পতাকা, এ যেন ভালোবাসার এক নাম-এক পরিচয়।
লাল-সবুজের এই আবির্ভাব যে সেদিন শুধু জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার কিংবা অন্য বিশেষ স্থানে থাকবে, তা কিন্তু নয়। বিজয়ের এই আনন্দ থাকে সর্বত্র। ঘরের কোণে থাকা সবুজের মাঝে, এমনকি পড়ার টেবিলের সামনের দেয়ালে টানানো সবুজের মাঝে লাল রঙে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্রটিকে ঘিরে। এছাড়া বসার ঘরের টেবিলে রাখা বাংলা বর্ণের সে সব অক্ষরের সাথে, যা একটি স্বাধীন দেশ এবং সে দেশের মাতৃভাষা অর্জনের লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। যে লড়াইয়ের ফলাফল স্বরূপ বিজয়ের এই দিনটিতে ছোট থেকে বড় সবার হাতে থাকে গাঢ় সবুজের মাঝে লাল বৃত্তের পতাকাটি।
এদিন লাল-সবুজ শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে বিজয়ের রঙে নিজেকে সাজিয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠে সবাই। চারিদিক যেন উৎসবমুখর হয়ে উঠে বিজয় উদযাপনে। বিজয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পতাকার এই দুইটি রঙ আমাদের মনে অনুপ্রেরণা জোগায়। আর তাই তো তারুণ্য আর সাহসিকতার এক অনন্য পরিচয় বহন করা লাল-সবুজ রঙ বিজয়ের রঙে রঙিন হয়ে থাকবে পৃথিবীর মানচিত্রে চিরকাল।