By Tasnim Jarin
একবার ভাবুন তো, একটি ঘরের শূন্য দেয়াল যদি ছবি আঁকার ক্যানভাস হতে পারে, তবে সে দেয়ালে কতশত গল্পই না এঁকে দেয়া যায়। প্রতিটি গল্পই হবে ভিন্ন। একটার সাথে আরেকটার কিছু অংশ মিলে গেলেও, গল্পদের থাকবে নিজস্ব উদ্দেশ্য, কাহিনী এবং ধারা। আর এভাবে প্রতিটি গল্পই হয়ে উঠবে একেকটি গল্প কথা।
একটা সময় ছিল যখন মানুষ গুহার দেয়ালে এঁকে রাখতো শিকারের গল্প। কখনো আঁকাবাঁকা শিকারের পথ, কখনো হুঁশিয়ারি, কখনো বা জীবজন্তু; সঙ্কীর্ণ গুহা পথের প্রতিটি দেয়ালই যেন ছিল একেকটি ক্যানভাস। শিকারের সে ছবিগুলোই ছিল একেকটি গল্প।
আদিম যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান, দেয়াল জুড়ে গল্পগুলো এঁকে দেয়ার অভ্যাস কিন্তু বেশ পুরনো। সময়ের পালাক্রমে গল্পের ধারায় পরিবর্তন আসলেও আজও ঘরে এবং বাইরের দেয়ালে বিশাল এই ক্যানভাসে সাদাকালো থেকে রঙিন হয়ে উঠেছে অনেক গল্প।
রঙ-তুলি ছাড়াই পশুর হাড় দিয়ে পাথরের দেয়ালে খোঁদাই করে আঁকা এই গল্প গুলো পরবর্তী সময় রঙিন রূপ নেয় গ্রাফিতি হয়ে। সাদাকালো গ্রাফিতিও আছে, তবে সেখানে ধীরে ধীরে জায়গা করে নেয় রঙিন গল্পগুলো। ভাব প্রকাশের এই দেয়াল চিত্র গুলো দেখতে সাধারণ মনে হলেও এর পেছনের অনুভূতি এবং গল্পগুলো হয় অনেক গভীর এবং ভাবনাময়। আর তাই বলতেই হয় দেয়াল অঙ্কন মানেই যে শুধু রঙ-তুলি কিংবা স্প্রে দিয়ে আঁকিবুঁকি তা কিন্তু নয়, সাথে এর পেছনের গল্প গুলোরও থাকে অর্থ এবং তাৎপর্য।
তবে ঘরের বাইরের দেয়ালের মতো ঘরের ভেতরের দেয়ালগুলোও কিন্তু হতে পারে একেকটি গল্পের ক্যানভাস। যেখানে গল্পগুলো সাধারণ কোন মুহূর্তের যেমন হতে পারে তেমনি বিশেষ কোন অর্থ বহন করার জন্যও করা যেতে পারে। রঙের স্প্রে ব্যবহার করে আপনি চাইলে ঘরের যেকোনো দেয়ালে এঁকে দিতে পারেন পছন্দের কোন উক্তি, বিশেষ কোন শব্দ, অথবা রংধনুর রঙেও এঁকে দিতে পারেন উদারতার গল্প।
যাদের জ্যামিতিক ডিজাইন ভালো লাগে বা যারা অংক কিংবা ফর্মুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন তারা কিন্তু জ্যামিতিক প্যাটার্নে রুমের যেকোনো অংশে এঁকে দিতে পারেন জ্যামিতিক প্যাটার্নে ভালোলাগার গল্প। কিংবা ধরুন আপনি যদি পাহাড় প্রেমী হোন তবে দেয়ালের গল্পে থাকতে পারে আপনার ট্রেকিং করা আঁকাবাঁকা সে পথের ছবি এবং কষ্টের পথ পাড়ি দেয়ার গল্প। কিংবা কালারফুল কোন আর্টওয়ার্ক হয়তো মনে করিয়ে দিচ্ছে দারুণ কোন জায়গার কথা।
এছাড়া ইলিউশনের মাধ্যমেও ঘরের দেয়ালে এঁকে নিতে পারেন রাতের আকাশে তারার মেলা, গ্রামীণ কোন দৃশ্য কিংবা পছন্দের কোন মুভির বিশেষ কোন মুহূর্ত। হতে পারে গল্পের আকাশটা ছিল গোলাপি আর আপনিও নীল আকাশের সীমা ছাড়িয়ে নিজের গল্পের আকাশটিকে দেখতে চান গোলাপি কিংবা পার্পেল রঙে, তবে এঁকে দিন আপনার ঘরের দেয়ালে মনের মতো করে।
এছাড়া ঘরের দেয়ালে গল্প জুড়ে দেয়ার আরেকটি দারুণ উপায় হচ্ছে ডুডল করা। ডুডল সাধারণত সাদা ক্যানভাসে অর্থাৎ সাদা রঙের দেয়ালে রঙিন অথবা শুধু সাদাকালো রঙের মার্কার দিয়েই মনের কথা বা অনুভূতিগুলোকে গল্পের আকারে দেয়ালে এঁকে দেয়া। এমনও হতে পারে, ডুডলে আমরা দেখছি একজন মানুষকে, যিনি চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। আর ঐদিকে একইসময়ে তার মস্তিষ্কে কী কী চলছে, তিনি কী ভাবছেন, তা দেখানো হচ্ছে ছোট ছোট বিভন্ন ডুডল আঁকার মধ্য দিয়ে।
তাই ক্যানভাসের পাতায় রং-তুলি দিয়ে আঁকা গল্প যদি ঠিক একইভাবে ঘরের দেয়াল ক্যানভাসেও এঁকে দেয়া যায়, তবে তা দেখতে যেমন ইউনিক হবে, তেমনি প্রতিটি দেয়ালেই আপনি এঁকে দিতে পারবেন দারুণ সব গল্প। সাধারণত ঘরের বিশাল দেয়াল গুলো তো ফাঁকাই পড়ে থাকে। তবে শূন্য দেয়াল জুড়ে যদি রঙিন সব গল্প কথা এঁকে দেয়া যায়, তবে তো দারুণ হবেই, তাই না!