by Sadia Islam Brishti
রঙ দেখলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। চোখ চকচক করে ওঠে। ওই যে দেয়ালের গোলাপি রঙ, আমি কিন্তু তাকে গোলাপি নামে চিনি না। চিনি হাওয়াই মিঠাইয়ের রঙ নামে। নীল আমার কাছে আকাশের রঙ, লাল রঙটা কৃষ্ণচূড়ার। ছোটবেলায় সেই যে একেকটা রঙ ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় নিয়ে নিয়েছিল, তাদের সেই পরিচয় বদলায়নি। আমাদের সবার জীবনে রঙয়ের গল্পটাই তো এমন, তাই না?
আমার মায়ের গায়ের রঙ দুধে আলতায়। আর আমাকে ডাকতো সবাই কালিবুচি নামে। গায়ের চামড়া পাতলা হওয়ায় আমি নীল ছিলাম ছোটবেলায়। পরে সেখান থেকে কালচে গায়ের রঙ পাওয়া। এখন সেই কালচে রঙ আর নেই। তবে কালিবুচি মেয়েটার কালো রঙয়ের প্রতি অন্যরকম এক ভালোবাসা আছে। সবাই যখন কালো রঙ এড়িয়ে চলতো, আমি তখন ঘরের দেয়াল, আর্টের খাতা কালো মেঘ আর কালো চুলের খোপা একে রাখতাম।
আমার বসার চেয়ার থেকে শুরু করে খাওয়ার থালাটা পর্যন্ত হতে হতো ভীষণ চকমকে। রঙিন প্রজাপতির পেছনে ছুটে বেড়াতাম। ফুল ভীষণ পছন্দের ছিল। তাও সেটা ওই রঙয়ের জন্যই। মনে আছে, একবার বাবার বদলী হয়ে গেল। বদলীর সময় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কষ্টটা বন্ধু আর পরিচিত বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য নয়। কষ্ট লাগছিল উঠানের সামনে লাগানো আমার হাতের প্রথম নয়নতারা গাছের জন্য। হিসেব করে ঠিক বাড়ি ছাড়ার দিনের সকালেই গাছে ৫ টা ফুল ফুটেছিল। আজ, এতোদিন পরেও মনে পড়ে ফুলগুলোর সেই ঝকমকে চেহারার কথা। এখন অবশ্য সেই উঠান আর নেই। পুরনো বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি বানানো হয়েছে। উঠানের জায়গা তাতে নেই।
ছোটবেলায় আমার একটা জামা ছিল। নীল! একটা লাল জামাও ছিল। সেটা আম্মুর বেশি পছন্দ ছিল। কিন্তু আমার ভালো লাগতো আকাশের মতো নীল জামাটাকে। আমি বাসার উপরে, ছাদের চিলেকোঠায় সেই নীল জামা পরে বসে থাকতাম। অনেক অনেক খেলনা ছিল আমার। সেগুলো দিয়ে খেলতাম। আকাশের নীল রঙয়ের দিকে তাকালে আমার মনে হতো, আমিও এক টুকরো মেঘ।
ঈদের জামা আর জুতোর প্রতি অন্যরকম এক আকর্ষণ ছিল। আমার জামার রঙটা হতে হত একেবারেই আলাদা। সাথে মিল করে জুতো, ক্লিপ আর টিপ। ঠোঁটে মায়ের লাল লিপস্টিক লাগিয়ে নিতাম। আর চোখে কাজল। আম্মু একদম পছন্দ করতেন না তার সাজের জিনিসে আমি হাত দিই। একবার সে কী বকা আমাকে! সেবার পুরো মেকআপ বক্সটাই ফেলে দিলো আম্মু। আম্মুর মিষ্টি কালারের শাড়ি পছন্দ ছিল। আমি সবসময় খালি ভাবতাম, মিষ্টি তো অনেক রঙয়ের হয়। তাহলে এতোকিছু বাদ দিয়ে এই প্রায় গোলাপি রঙটাই কেন মিষ্টি কালার। এখনো নিশ্চিত না, ওই প্রায় গোলাপি রঙটাই তো মিষ্টি কালার, তাই না?
মজার সব কবিতা কিংবা শুধুই ছবি দিয়ে ভরা ছোটবেলার বইগুলোর কথা মনে আছে? কত রকমের রঙ যে থাকতো সেখানে। ধীরে ধীরে আমাদের বইগুলোতে ছবির জায়গা নিয়ে নিয়েছে লেখা। এখন তো পাতার পর পাতা কালো রঙয়ের লেখা দিয়ে ভর্তি থাকে বইগুলো।
বাবা-মায়ের কাছে রঙ পেন্সিলের আবদার করেননি ছোটবেলায়, এমনটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কত কত রকমের রঙ। একটা যদি কোনমতে হারিয়ে যেত তাহলেই মন খারাপ হয়ে যেত। এখনো কি রঙ করেন? খাতায় না হোক, ঘরের দেয়ালে কিংবা অন্য কোথাও রঙ করতে কি ইচ্ছে করে না? আমি ছোটবেলায় রঙিন সব কার্টুন আঁকতাম। বাবা-মা বলতেন, বড় হয়ে আমি খুব বড় আকিয়ে হবো। সেটা হইনি অবশ্য। বড় হয়ে রঙহীন জীবনে আটকে গিয়েছি।
আজকাল সেই পুরনো সময়ের রঙগুলো জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। তাতে অবশ্য অতটা কষ্ট লাগে না, যতটা লাগে চারপাশের ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে দেখলে। ওদের জীবনে আমাদের ছোট্টবেলার সেই রঙ কই? সেই যে দাদী পান খেয়ে পানের পিক ফেলে ফেলে মিষ্টি একটা গন্ধ আর সাথে খয়েরী রঙ দিয়ে উঠান ভরিয়ে ফেলতো, সেই সময়গুলোও তো নেই। ছোটবেলার সেই রঙিন দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে আবার? তাহলে বেশ তো! ফিরে যান না সেই দিনে, জীবনকে আবার রঙিন করে তুলুন!
শুরুটা করতে পারেন ঘরের দেয়াল দিয়েই। বার্জার আপনার সেই ফেলে আসা দিনের রঙগুলো দিয়ে আপনার জীবনকে ভরিয়ে তুলতে চায় আবার। তাই নানারকম রঙ আর নকশা রেখেছে বার্জার।
আর আপনার শিশুর ঘর, সেটাকেও সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনি খুব সহজেই!
তাহলে আর দেরী কীসের? ফিরে যান পুরনো দিনে, রঙগুলোকে আপন করে নিন আবার, আগের মতো!