By Tasnim Jarin
প্রকৃতির মাঝে যেন রঙের কোনও শেষ নেই। ঋতুভেদে প্রকৃতির এই পরিবর্তন শোভা পায় এর ফুলে, ফলে এবং রঙে। সময়ের পালাবদলে একেক রূপে প্রকৃতি তার পরিচয় ফুটিয়ে তোলে। কখনো বসন্ত বাতাসে লাল-হলুদের সাজে, কখনো বা শুভ্রতার তালে মেঘে ঢাকা বৃষ্টির দিনে বা হেমন্তের ছোঁয়ায় সাদা-কমলার সাজে। শীতের বিষণ্ণ পাতা ঝরার দিনেও কিন্তু প্রকৃতি রঙহীন থাকে না। বরং, শুকনো পাতার বাদামী রঙও তুলে ধরে প্রকৃতির ব্যক্তিত্ব। আর তাই তো হাজারো রঙে রাঙানো প্রকৃতির মাঝেই মেলে রঙ-তুলির অনুপ্রেরণা।
প্রকৃতির মাঝে অন্য আর সব রঙের উপস্থিতির পরিবর্তন দেখা দিলেও সবুজ রঙটি থাকে যেকোনো সময় জুড়ে। আর তাই তো প্রকৃতির কথা বললেই সবার প্রথম বলা হয় সবুজ রঙের কথা। সবুজ রঙে ঘরের দেয়াল সাজানো যেমন হয়ে থাকে, তেমনি স্বয়ং প্রকৃতিই যেন ছোট-বড় বিভিন্ন গাছের রূপে শোভা পায় ঘরের বিভিন্ন কোণে। আর তাই তো ঘর সাজানোর কথা কিংবা দেয়াল রাঙানোর প্ল্যানে সবুজ রঙটির থাকে বিশেষ জায়গা। আর হবেই বা না কেন! ঘরের ভেতরে কিংবা ছাদে খোলা আকাশের নিচে স্বস্তির মুঠো ভরা বাতাস পেতে সবুজের ছোঁয়া যে আমাদের জন্য অক্সিজেনের উৎস।
অন্যান্য রঙের মতো সবুজ রঙটিরও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শেড। হালকা থেকে গাঢ়, নিয়ন, লাইম, সি গ্রিন, মিন্ট গ্রিন, টি গ্রিন ইত্যাদি ছাড়াও রয়েছে আরও কিছু শেড। সবুজ রঙের সৌন্দর্য এর প্রতিটি শেডের মতোই অনন্য।
বাংলাদেশি হিসেবে গাঢ় সবুজ রঙটির প্রতি রয়েছে আমাদের অন্যরকম অনুভূতি। আর হবেই বা না কেন, আমাদের জাতীয় পরিচয় বহন করা পতাকাটির নকশায় যে রয়েছে গাঢ় সবুজের উপস্থিতি। বাংলার সবুজ প্রান্তের এবং তারুণ্যের সংগ্রামের শক্তির প্রকাশ ঘটে এই রঙের মধ্য দিয়ে। আর তাই তো ঘরের নির্দিষ্ট কোন দেয়ালের রঙে থাকতে পারে বিজয়ের অনুভূতি বহন করা পতাকার গাঢ় সবুজ রঙটি, ‘অনুভূতির দেয়াল’ নামে।
প্রকৃতির মধ্যেও যে রয়েছে সবুজের সুন্দর কিছু মিশ্রণ। গাছের সবুজ পাতারাও কিন্তু গাছের ধরন ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ঠিক যেমন সবুজের শেডে রয়েছে ভিন্নতা- সি গ্রিন, টিল গ্রিন এবং জাঙ্গল গ্রিনের মতো। ঘরের ভেতরটা আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে তাই সবুজ রঙটি হতে পারে ঘর সাজানোর জন্য পারফেক্ট ঠিক ছবিটির মতোই। বেতের আসবাব কিংবা সাদা রঙের যেকোনো ফার্নিচার বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে যাবে এ রঙের দেয়ালের সাথে। শুধু মানিয়েই যাবে না, বরং হাইলাইট করে তুলবে।
তবে সি গ্রিন রঙের সাথে কাঠের আসবাবের ব্যালেন্সিং এক কথায় অসাধারণ। ঠিক যেন রঙ-তুলিতে আঁকা কোনও ছবি, কিন্তু আসলে বাস্তব। আর এর সাথে ইনডোর প্ল্যান্টসও কিন্তু ঘরের কর্নার গুলোকে হাইলাইট করবে, ঠিক যেন ঘরের ভেতর প্রকৃতির ছোঁয়া। এ ধরনের রুমে ফ্লোর ম্যাট এবং সাদা অথবা একই রঙের থ্রো পিলো বেশ মানাবে।
তবে ড্রয়িং রুমটা যেহেতু সাধারণত বেশ প্রশস্থ ধরনের হয়ে থাকে, তাই এ ধরনের রুমের ক্ষেত্রে মস গ্রিন, মিন্ট গ্রিন কিংবা অ্যাকুয়ামেরিন রঙ হতে পারে রাইট চয়েস। সিলিং-এ থাকবে সাদা রঙ। অন্যদিকে কাউচ অথবা সোফা রাখতে পারেন দেয়ালের সাথে মিলিয়ে কোন হালকা রঙের কন্ট্রাস্টে, হতে পারে সাদা বা অ্যাশ রঙের। সাথে প্যাটার্ন কুশন এবং আর্ট ফ্রেম রুমটি করে তুলবে ছবির মতো সুন্দর। তবে কিছুটা ভিন্নতা আনতে হালকা প্রিন্টেড কোনও সিঙ্গেল সোফা রুমের যেকোনো একটা কর্নারে রাখলে তা মডার্ন একটা লুক দিবে, যা ইদানিং সময়ে বেশ ট্রেন্ডি।
বেড রুমের ক্ষেত্রেও হালকা রঙের প্রাধান্য বেশি থাকে। আর তাই এক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন সবুজ পরিবারের যেকোনো হালকা শেড। মিন্ট, টারকোয়েজ, লাইট গ্রিন, প্যাস্টেল গ্রিনের যেকোনো শেড থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়। এতে করে রুমটি দেখতে যেমন বড় দেখাবে, তেমনি বেশ স্নিগ্ধ এবং মায়াবী লুক দিবে নিঃসন্দেহে। রুমের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলতে আয়না লাগাতে ভুলবেন না যেন! রুমের ধরন এবং কর্নার বুঝে আয়নার সাইজে থাকবে ভিন্নতা, তবে ডিজাইন হতে হবে সিম্পল। সাথে ফ্লোরে রাখতে পারেন শতরঞ্জি বা ফ্লোর ম্যাট।
লিভিং রুমের দেয়ালের জন্য সবুজ এর পাশাপাশি কনট্রাস্ট যেকোনো রঙ দিয়ে একটি দেয়াল রঙ করে নিলে তা কিন্তু সবুজ রঙটিকে আরও ফুটিয়ে তুলবে। ভিন্ন রঙের দেয়ালের ঠিক সামনে এবার রেখে দিন বড় কোনও ইনডোর প্ল্যান্ট এবং ঠিক এর কর্নারে থাকবে একটি ফোকাস লাইট। সবুজের ছায়া যখন দেয়ালে পড়বে নিশ্চিত মনটা ভালো হয়ে যাবে।
ডাইনিং রুমের ক্ষেত্রে অলিভ, লাইম, থাইম কিংবা স্প্রিং গ্রিন হতে পারে বেস্ট অপশন। এ রঙগুলো যেমন খুব হালকা নয়, তেমনি সি গ্রিন বা টিল গ্রিন এর মতো গাঢ় শেডের হবে না। ডাইনিং সেকশনটা উজ্জ্বল থাকলেই তা দেখতে সুন্দর দেখায়, তাই বেছে নিতে পারেন উপরে উল্লেখ করা পছন্দসই যেকোনো শেড।
ইট-সিমেন্টের দালানকোঠার ভিড়ে আজকাল সবুজের দেখা পাওয়াই বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই তো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে ঘরের কোণে, ছাদের খোলা জায়গায় কিংবা বারান্দার গ্রিলে, যেখানেই সম্ভব সবুজকে বাঁচিয়ে রাখা অনেক জরুরি। শুধু তাই-ই নয়, সবুজ রঙটি নাকি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে স্ক্রিন টাইম যেহেতু বেড়েছে, তাই সবুজ দেখা আরও বেশি প্রয়োজন। মনকে প্রাণবন্ত এবং সতেজ রাখতে তাই প্রকৃতির রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারেন ঘরের ভেতরটাও। সবুজের ছোঁয়া থাকুক ঘরের প্রতিটি কোণে, বেঁচে থাকুক সতেজতা।