By Tasnim Jarin
প্রকৃতির এত রঙ, এত রূপ দেখে কার না মন জুড়ে যায়! একেক ঋতুতে প্রকৃতি সাজে ভিন্ন রূপে। যেন সারা বছর জুড়েই চলে প্রকৃতির উৎসবের আমেজ। আর সেই আমেজে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে আশেপাশের পরিবেশ। প্রকৃতির এই উদ্যমতায় আমরা খুঁজে পাই বেঁচে থাকার স্বাদ, জীবনকে উপভোগ করার নতুন স্পৃহা। তবে প্রকৃতির এই রঙ যদি জায়গা করে নেয় আমাদের অন্দর জুড়ে, তবে কেমন হয় বলুন তো?
হেমন্ত কিংবা বসন্ত প্রকৃতির মাঝে জায়গা করে নেয় উজ্জ্বল সব রঙ। কখনো হলুদের রাজ্জ্যে হারিয়ে যাওয়া, কখনো আবার সেঞ্চুরি পাতার লাল রঙের গালিচা। আর এসবের সাথে সবুজ যেন কখনো হয় না মলিন। তুষার ঢাকা শীতেও যখন ঘরের ভেতর জায়গা করে নেয় বাহারি ইনডোর প্ল্যান্টস, তখন অন্দর রাঙাতে সবুজের পাশাপাশি যেকোনো রঙই হবে মানানসই। নির্দিষ্ট কোন রঙের ছকে বেঁধে না রেখে অন্দরের সাজে হেমন্তের রঙ থাকুক সারা বছর জুড়ে।
হেমন্তের রঙের কথা বললেই সবার প্রথম মনের পর্দায় ভেসে উঠে হলুদ রঙে রাঙানো সারি সারি গাছের পাতা। আমাদের দেশে এই দৃশ্য কম দেখা গেলেও, দেশের বাইরের ছবিগুলোতে এই দৃশ্য যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। আর তাই তো অনেকেই হেমন্তের অপেক্ষায় থাকেন।
হলুদ রঙটির মধ্যে থাকে তারুণ্যের ছোঁয়া। সজীবতা এবং আত্মবিশ্বাসের জায়গা করে নেয়া হলুদ রঙটি তাই নির্দ্বিধায় জায়গা করে নিতে পারে ঘরের যেকোনো দেয়ালে। হলুদ রঙের ক্যানভাসে কাঠগোলাপের সাদা যেমন ফুটে ওঠে, তেমনি আপনি চাইলে হলুদ রঙ করা দেয়ালে করিয়ে নিতে পারেন দারুণ কোন ফুলের ইলিউশন। প্রাণবন্ত হলুদের উপস্থিতি যেন আপনার ঘরে হেমন্ত ধরে রাখবে সারা বছর জুড়ে। তবে ঘরের সব দেয়ালে না করে, বরং নির্দিষ্ট কোন একটি দেয়াল হলুদ রঙ করে নিতে পারেন। হলুদের সাথে সাদা এবং সবুজের কনট্রাস্ট মানাবে বেশ, তাই সাদা রঙে করা আর্টওয়ার্ক এবং ছোট প্ল্যান্টস রাখুন ডেকোরেশনের তালিকায়।
হলুদ রঙটি মূলত কমলা আর সবুজ রঙের মাঝামাঝি রঙ। যে রঙটিকে আমরা খুঁজে পাই হেমন্তের পাতার রঙের মাঝে। লিভিং রুম, বেড রুম অথবা কিচেন বা ডাইনিং রুমের কেবিনেট বা টেবিলের রঙটা হতে পারে হলুদের যেকোনো শেডে। এতে করে পরিবেশটা বেশ উজ্জ্বল দেখাবে। আর সাথে পাতাবাহার গাছ এবং বেতের কিছু ডেকোরেশনের জিনিসও রাখা যেতে পারে রুমের বিভিন্ন কর্নারে।
প্রকৃতি মানেই হল যেখানে থাকবে সবুজের উপস্থিতি। যেকোনো ঋতুতেই সবুজকে ধরে রাখতে তাই এবার ঘরের ভেতরটাই সবুজে সাজিয়ে নিন। বিশেষ করে হেমন্ত শেষে শীতের সময় ঘরের ভেতরেও প্রাণবন্ত ভাব ধরে রাখতে সবুজ রঙটিকে ধরে রাখা চাই সবসময়। এক্ষেত্রে দেয়াল রঙ করা ছাড়াও ঘর সাজানোর জন্য সবুজ রঙের ক্রাফটস, ফেব্রিক বা পেইন্টিং হতে পারে দারুণ এক সমাধান।
বেতের আসবাব কিংবা সাদা রঙের যেকোনো ফার্নিচার বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে যাবে সবুজ রঙের দেয়ালের সাথে। অথবা চাইলে সাদা রঙের দেয়ালের সামনে সবুজ রঙের বড় একটি আর্মচেয়ার, বাস্কেটে রাখা লতানো গাছ কিংবা ইলিউশন করাতে পারেন ড্রইং রুম কিংবা লিভিং রুমের দেয়ালে। বলা হয়ে থাকে, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সবুজ রঙটি অনেক কার্যকরী। তাই সবুজ রঙ দিয়ে চাইলে স্টাডি রুমও সাজিয়ে নিতে পারেন।
সি গ্রিন রঙের সাথে কাঠের আসবাবের ব্যালেন্সিং হয় বেশ। সাথে লেকার রঙের ফ্রেমে করা পেইন্টিং ও দেয়ালে মানাবে বেশ। কনট্রাস্ট হিসেবে সাদা রঙের পর্দা সবুজ দেয়ালে বেশ মানিয়ে যায়। আর এর সাথে ইনডোর প্ল্যান্টসও ঘরের কর্নার গুলোকে হাইলাইট করবে, ঠিক যেন ঘরের ভেতর প্রকৃতির ছোঁয়া। এ ধরনের রুমে ফ্লোর ম্যাট এবং সাদা অথবা একই রঙের থ্রো পিলো বেশ মানাবে।
হেমন্তের রঙ গুলো এতটাই সতেজ এবং উজ্জ্বল, যার উপস্থিতি ঘরকে যেন আর মায়াবী করে তুলে। আর তাই হলুদ- সবুজের পাশাপাশি অন্য কোন রঙের কথা বলতে গেলে লাল-কমলা রঙ চলে আসবেই। এই রঙ গুলো কিছুটা গাঢ় এবং উজ্জ্বল হওয়ার কারণে দেয়াল রাঙানোর ক্ষেত্রে কিছুটা ইতস্তত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই রঙের ব্যবহার আপনার ঘরকে যেন আরও আর্টিস্টিক করে তুলবে। আর তাই সোফা, থ্রো পিলো, রাগস বাছাইয়ে বেছে নিতে পারেন লাল-কমলার কম্বিনেশনকে।
আর দেয়াল রঙ করার কথা যদি বলি, তবে ড্রইং রুমের স্পেস যেহেতু বেশি থাকে, তাই এই রুমের বড় কোন দেয়ালে লাল-কমলার শেড করাতে পারেন। আর চমৎকার ব্যালেন্স ধরে রাখতে বাকি দেয়াল গুলোয় করে নিন সাদা রঙ। দেখতে অনেকটা ক্যানভাসের মত মনে হবে, যেন দেয়াল জুড়ে অ্যাবস্ট্রাক্ট কোন আর্ট। দেয়ালের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করতে ফোকাস লাইট বা ল্যাম্প রাখুন দেয়ালের দুই প্রান্তে।
হেমন্ত মানেই যেন প্রকৃতি জুড়ে রঙের খেলা। ঋতু বদলের দারুণ এই সময়ে শীতের ঠিক আগ মুহূর্তে ঘরের ইন্টেরিয়রে পরিবর্তন আনতে তবে আর দেরি না করে, আজই বেছে নিন প্রাণবন্ত এই রঙগুলো থেকে আপনার পছন্দের যেকোনোটি। ঘরের সাজে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে রঙই হোক আপনার উদ্যমতার অনন্য শক্তি।