By Tasnim Jarin
প্রকৃতির মাঝে কাটানো সময় যে কতটা শান্তির হয়, তা হয়তো গৃহবন্দী সময়ে খুব করে অনুভব করা যাচ্ছে। কেননা, আজকাল মন খারাপ হলে, কিংবা কাজের অতিরিক্ত চাপে বিমর্ষ হয়ে একটু নিঃশ্বাস নিতে এদিক-সেদিক যে আর ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে না। চার দেয়ালে বন্দী জীবনে অভিমান শুরু হলেও, দিনশেষে এই দেয়ালের সাথেই যে দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে হচ্ছে। চাইলেই এখন আর বাসে চড়ে অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া সম্ভব না। পাহাড়-সমুদ্র দেখার নেশায় এ দুই চোখ যে আজ বড্ড ক্লান্ত। হয়তো আর কিছুদিন পরেই এই গৃহবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে সবুজের প্রেমে আমাদের গাড়ি ছুটে যাবে বহুদূরে, কিন্তু ততদিনে ঘরের দেয়ালেই যদি প্রকৃতিকে এঁকে নেওয়া যায়, তবে তো ভালোই হয়!
গতানুগতিক রঙে কিংবা ডিজাইনে সাজানো ঘরের দেয়ালে ভিন্নতা আনতে ফুলের ইলিউশন যোগ করতে পারে ভিন্নমাত্রা। পছন্দের রঙে দেয়াল সাজাতে আমাদের সবারই কম-বেশি ভালো লাগে। তবে নির্দিষ্ট একটি রঙে দেয়াল সাজানোর প্রথা থেকে এখন ইলিউশনই নতুন ট্রেন্ড। ঘরের দেয়ালের প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে তাই বার্জার এক্সপেরিয়ান্স জোন নিয়ে এসেছে দারুণ সব ডিজাইনের ফুলের ইলিউশন। পছন্দমতো বেইজ কালারে ফুলের ইলিউশন ফুটিয়ে তুলতে তাই বেছে নিতে পারেন পছন্দের ডিজাইন।
ফুল যদি একটু বড় ধরনের ভালো লাগে, তবে সেক্ষেত্রে জিনিয়া ফুলের ইলিউশন হবে পারফেক্ট চয়েস। এই ইলিউশনের একটা দারুণ দিক হচ্ছে এখানে হালকা এবং গাঢ় দুটো শেডের কম্বিনেশন থাকবে, যা ইলিউশনের ডিজাইনটাকে আরও ইউনিক করে তুলবে। লিভিং রুমের দেয়ালের জন্য এই ইলিউশন হতে পারে দারুণ এক উদাহরণ। সাধারণত লিভিং রুমে আলো বাতাসের চলাচল বেশি থাকে, এমনকি দিনের বেশিরভাগ সময় হয়তো এই রুমেই কাটানো হয়। দিনের আলোয় কিংবা ল্যাম্পের আলো-আঁধারে এই ইলিউশন দেয়ালে মানাবে বেশ। তবে এই ইলিউশনের সাথে মিল রেখে ঘরে আসবাব রাখতে হবে এক রঙের। পর্দা থেকে শুরু করে সোফার কাভার, ফ্লোর রাগ সব কিছুই হতে হবে এক রঙের ফেব্রিকের। তবে চাইলে প্যাটার্ন কুশন কভার বেছে নিতে পারেন আর রুমের কর্নারের জন্য ল্যাম্প। নিঃসন্দেহে দারুণ মানিয়ে যাবে জিনিয়া ফুলের ইলিউশনের সাথে।
ঘর অনুযায়ী জিনিয়া ইলিউশনের জন্য চাইলে পছন্দের কালার কোডও বেছে নিতে পারেন। বার্জার এক্সপেরিয়ান্স জোন আপনাকে এতোটুকু সুবিধা তো দিচ্ছেই।
শোবার ঘরের দেয়ালের জন্য হালকা রঙটাই অনেকের বিশেষ পছন্দের হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে মল্লিকা ইলিউশন মানাবে বেশ। এই ইলিউশন সাধারণত হালকা রঙের উপর হয়ে থাকে, আর ফুলগুলো থাকে ফাঁকা ডিজাইনে, যা ছিমছাম শোবার ঘরের দেয়ালের জন্য মানানসই।
পর্দার রঙ এই রুমের দেয়ালের জন্য কনট্রাস্ট হতে পারে। তবে সাদা বা হালকা যেকোনো রঙের নেটের ডাবল পর্দা আর কাঠের যেকোনো আসবাব যেন অন্দর মহলের শোভা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
বাসার ড্রইং রুমের দেয়ালের জন্য মিতালি ইলিউশন হবে এক কথায় অসাধারণ। সাধারণত এই ইলিউশন অনেকটা জলছাপের মতো হয়ে থাকে, যেখানে ডিজাইন রঙের মধ্য দিয়ে প্রাধান্য পায়। এই ইলিউশনের প্যাটার্ন এবং বেইজ রুমের দেয়ালে ক্ল্যাসি ভাব ফুটিয়ে তুলবে। যেহেতু বসার ঘরটা বড় হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে এই ইলিউশনে রুমটাও যেমন অনেক বড় দেখাবে, তেমনি ট্রেন্ড ফলো করলে মডার্ন লুকও এই ইলিউশনে আনা সম্ভব।
আর এই ইলিউশনের দেয়ালের এক কর্নারে রাখুন সবুজের ছোঁয়া অর্থাৎ, কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট। আর দেয়ালের অন্যপাশে রাখুন একটি ল্যাম্প। আর দেয়াল জুড়ে থাকতে পারে দারুণ কোন বড় পেইন্টিং কিংবা ছোট-বড় কিছু ফটোফ্রেম, পরিবারের সাথে কাটানো দারুণ মুহূর্তগুলোর এক টুকরো স্মৃতি হিসেবে।
পড়ার রুম কিংবা যে রুমে লাইব্রেরি থাকে বা অফিসের কাজ করা সে রুমের দেয়াল যতটা সম্ভব হালকা ডিজাইনে পেইন্ট করা উচিত। কেননা, এতে করে চিন্তাভাবনা করতে কিংবা কাজে মনোযোগ দিতে তা সাহায্য করবে। আর এক্ষেত্রে কাশফুলের ইলিউশন অনেক ছিমছাম হওয়ায় মানানসই হবে বেশি। এই ইলিউশন প্যাটার্নে থাকা পাখির মতো আপনারও হয়তো ইচ্ছে হবে চিন্তার জগতে হারিয়ে যেতে কোনরকম বাধা ছাড়াই। আর তাই তো পড়ার ঘরের দেয়ালের জন্য কাশফুলের নীল ইলিউশন হবে সবচেয়ে মানাসই।
আর এর সাথে দেয়ালের পর্দাটিও হওয়া চাই যেকোনো হালকা রঙের নেটের কিংবা হালকা ফেব্রিকের যেন তা রুমে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আসার সুযোগ করে দেয়। কারণ, পড়ার রুমের জন্য আলো-বাতাস অনেক বেশি প্রয়োজন। আর অবশ্যই এই রুমে অহেতুক আসবাব দিয়ে ভিড় করা যাবে না, শুধুমাত্র দরকারি আসবাবগুলোই পড়ার ঘরে রাখা উচিত।
অন্যদিকে খাবার ঘরের দেয়ালের জন্য বেছে নিতে পারেন রঙিন ফুলের কোন ইলিউশন। ফুল কিংবা পাতা যে ডিজাইনই হোক না কেন, বেইজ কালারের জন্য বেছে নিন উজ্জ্বল কোন রঙ। এতে করে মন থাকবে ফুরফুরে। আর যেহেতু খাবার রুম রান্নাঘরের পাশেই থাকে, হালকা রঙের কিংবা ডিজাইনের ইলিউশনে এতে ময়লা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই ভেনাস ইলিউশন প্যাটার্নে ডিজাইন করে নিতে পারেন আপনার বাসার ডাইনিং রুমের দেয়াল।
ঘরের দেয়ালের জন্য ফুলের ইলিউশন যেন একেবারে প্রকৃতির মাঝে থাকার একটা অনুভূতি দেয়। একদিকে প্রকৃতির সুন্দরতা যেমন আপনার ঘরের দেয়ালে বৈচিত্র্য আনবে, অন্যদিকে এই গৃহবন্দী সময়ে ঘরের দেয়ালে প্রকৃতির এ ছোঁয়া মনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সহায়ক হবে। তবে আর দেরি না করে, সময়টাকে কাজে লাগিয়ে এখনই না হয় পাল্টে ফেলুন ঘরের চিরচেনা সেই লুক। আর শুরু হোক ফুলের সাথে, ফুল এবং প্রকৃতির মাঝে বসবাস সারাক্ষণ!