By Kazi Sadia Islam Roza
নিজের রুচিবোধ আর শৈল্পিক গুণের ব্যবহার করে ঘর সাজাতে পছন্দ করি আমরা সবাই। তবে শুধু ফার্নিচার আর আলো নয়, ঘরের প্রধান অংশ দেয়ালও ঘরের সৌন্দর্য্য বর্ধনে মূখ্য ভূমিকা রাখে।
দেয়ালকে এখন নিজের মত করে সাজিয়ে তুলতে আর আলাদা করে কোন পেইন্টারের বিখ্যাত পেইন্টিং-এর প্রয়োজন নেই। নিজের মত করে, নিজের রুচি আর কর্নার বেছে খুব সহজেই নানা ইলিউশনস প্যাটার্ন ব্যবহার করে ঘরকে করে তোলা যায় অনেক বেশি আকর্ষনীয়।
একটা সময় ট্র্যাডিশন ছিল ঘরের রঙ হবে একটাই। ক্রিম, পেস্ট কিংবা ধূসরজাতীয় রঙেই সাধারণত অন্দর দেয়াল রাঙানো হতো। তবে এ ধারণা পাল্টে দিতে এক রঙা দেয়ালে উজ্জ্বল রঙের স্পর্শে প্রাণবন্ত করে তোলার তোড়জোড় শুরু হলো। ঘরের আর তিনটি দেয়ালে অফ কালার ব্যবহার করে একটি দেয়াল গাঢ় রঙের উষ্ণতায় ঢেকে দেয়া হতো। কোন রঙটি মনকে দেবে পজিটিভ এনার্জি বা কোন রঙটি সম্পদ-প্রবৃদ্ধি কিংবা আভিজাত্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে— এসব নিয়ে নানামতে চর্চা। তবে সময় এখন আরো এগিয়েছে। সেই সঙ্গে বদলেছে ধারাও। এখন ওই উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা দেয়াল আর কটকটে এক রঙা নেই, সেই দেয়ালেই বাড়তি উৎকর্ষ যোগ করেছে কালার ইলিউশনস। ইলিউশন হচ্ছে দেয়ালে রঙের সাহায্যে নিছক বিভ্রম সৃষ্টি করা। যেটি দেখলে মনে হবে, অনেকটাই বাস্তব।
বার্জার পেইন্ট রঙের ভুবনে নতুন ধারা এনেছে বাজারে। দেয়ালে এ মায়ার খেলা খেলতে হলে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, কোন ঘরের দেয়ালের জন্য কী ধরনের ইলিউশন ব্যবহার করতে হবে। ঘরের আয়তন কিংবা দেয়াল বা সিলিংয়ের রঙের ওপর নির্ভর করেই ইলিউশন করতে হবে। ঘর যদি বড় হয়, তবে একটু গাঢ় রঙের ইলিউশন করা যেতে পারে।
ড্রয়িংরুমের সিলিংয়ে যদি অরেঞ্জ কিংবা গ্রিন রঙের ব্যবহার থাকে, তবে নির্বাচিত দেয়ালের ক্ষেত্রে ইলিউশন পেইন্ট হিসেবে, সেই রঙটিই ব্যবহার করা যায়। আবার ড্রয়িংরুমে স্ট্রাইপ কিংবা অপটিক পেইন্ট করানো যায় অথবা গাঢ় রঙের ওপর যেকোনো ইলিউশন হতে পারে। এতে ঘরের শোভা বৃদ্ধির সাথে সাথে আলোর-ও পরিবর্তন হবে।
শিশুদের ঘরের সিলিংয়ে আকাশি রঙ ব্যবহার করে, তাতে তারা কিংবা দেয়ালে সমুদ্র বা মাছের ইলিউশন করা যায়। শোবার ঘরে হয়তো ছোট ছোট ঘাসফুল, বাঁশঝাড়, পাতা ঝরা গাছ কিংবা সবুজ অরণ্যানী অথবা ঘরের এক কোনায় হাজারো প্রজাপতির পাখা মেলার বিভ্রম সৃষ্টি করা যেতে পারে।
বেডরুমের ইলিউশন হওয়া চাই খানিকটা শান্ত, ঘরোয়া। আপনার একান্তই নিজস্ব যায়গাটিকে আপনি নিজের রুচি আর পছন্দের সাথে মিল রেখে রঙ করতে পারেন। ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র, জানালার অবস্থান, আলো এবং তাপমাত্রা বুঝে বেডরুমে ইলিউশন করা উচিৎ। খুব বেশি ডিজাইন বা জটিল প্যাটার্ন ব্যবহার না করে, হালকা প্যাটার্ন বেছে বেডরুম সাজানো উচিৎ।
কিছু ইলিউশন পেইন্ট পুরোপুরি মসৃণ নয়, অনেকটা অ্যাম্বুসের মতোই। বসার ঘরে কিন্তু এই ধরনের ইলিউশন খুব মানায়। তবে যে ধরনের ইলিউশনই ব্যবহার করা হোক না কেন; ঘরের গঠন, ফার্নিচার, সিলিং প্রভৃতির সঙ্গে মিল রেখেই করতে হবে।
তবে শুধু মনের ইচ্ছামতো রঙের ব্যবহার দেয়ালে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না; বেড কভার, কুশন কভার, ডাইনিং টেবিলের ম্যাট কিংবা ধোঁয়া ওঠা চায়ের টি পটে লাগানো টি কোজির রঙেও দেয়ালের ইলিউশনের সঙ্গে মিল রেখে আনতে হবে রঙের বৈচিত্র্য। এই যেন রঙের সাথে রঙের খেলা!
ঘরের দেয়ালে এ নতুন আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে খুব বেশি টাকা খরচ করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। ১০ বাই ১২ ফুটের দেয়ালে ইলিউশন ঘটাতে খরচ পড়তে পারে ৮-১২ হাজার টাকা। দেয়ালে ওয়াল পেপার ব্যবহার করে ইলিউশন করার চেয়ে ইলিউশন পেইন্টিংয়ের ব্যবহারিক উৎকর্ষতা অনেক বেশি। এটি পরিষ্কার করা যায় খুব সহজে। দেয়ালে কোনো দাগ বা ময়লা লাগলে সাবান পানি দিয়েও মুছে ফেলা যায়। দেয়ালে হালকা রঙ ব্যবহার করলে অনেক সময় সেটির ময়লাভাব বেশি চোখে পড়ে, তবে ইলিউশনে যেহেতু পেইন্টিং থাকে, তাই এটিতে ময়লা চোখে পড়ে না। বার্জার খুবই স্বল্প খরচে আপনাকে সাহায্য করতে সব সময় প্রস্তুত । ঘর রাঙানোর জন্য আমাদের নানা ধরনের প্যাকেজ রয়েছে, যেটি শ্রম ও পয়সা দুটোই বাঁচিয়ে দেবে।
ঘরের এই ছোট পরিবর্তন ঘরকে করে তুলবে অনেক বেশি আকর্ষনীয়। নিজের রুচি ও সাধ্যের মধ্যে তাই ইলিউশন নিয়ে আসতে পারে আপনার পরিচিত ঘরটিতে নতুনত্বের ছোঁয়া।