by Tasnim Jarin
বারান্দার গ্রিল বেয়ে বড় হয়ে ওঠা মানিপ্ল্যান্টের সেই লতা যেন আকাশ ছুঁয়ে যাবে এবার। আর এর পাশে থাকা নয়নতারা, শিউলি আর অর্কিড ছোট্ট বারান্দাটায় যেন রাজত্ব করে যাচ্ছে। কিন্তু এসবই তো হচ্ছে ঘরের বাইরে, ফুল আর পাতার থাকার ব্যবস্থা যদি ঘরের ভিতরেও করা যায়, তবে শৈল্পিক মনটা যে বেশ খুশি হয়ে যাবে!
তো যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ফুল আর পাতা দিয়ে দারুণ ক্রিয়েটিভ কিছু করার প্ল্যান যখন মাথার ভিতর ঘুরঘুর করছিল, তখন ভাবলাম শুকিয়ে যাওয়া ফুল, লতাপাতা দিয়ে নিজেই না হয় নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করি। তো কি ছিল সেসব আইডিয়া, চলুন জেনে নেয়া যাক।
প্রকৃতির মাঝে যে কত ধরনের ফুল-লতাপাতা আছে তা হয়তো আমরা জেনেও শেষ করতে পারবো না। একেকটির ডিজাইন, আকৃতি একেক রকম। এসবই যেন তাদের ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। কিছু পাতা দেখতে সরু-লম্বাটে, কিছু পাতা আবার একদম গোলগাল, কিছু আবার ছোট ছোট পাতায় ভরপুর ডাল। তো প্রকৃতির এই সুন্দরতাকে যদি ঘরের ভিতর নিমন্ত্রণ জানানো যায়, তবে তো ক্রিয়েটিভিটি অন পয়েন্ট হয়ে যাবে! তো এরকমই একটি আইডিয়া হচ্ছে ‘প্রেসড প্ল্যান্ট ফ্রেমস’ বা ফ্রেমের মাঝে একটু সবুজ ধরে রাখার কৌশল।
এর জন্য যা যা প্রয়োজন:
প্রথমে পছন্দমতো গাছের কিছু পাতা বা ডাল নিয়ে তা পুরনো কোন বইয়ের মাঝের দিকের যেকোনো পৃষ্ঠার উপর সুন্দরভাবে রাখুন। আলগা মাটি বা শুকিয়ে যাওয়া পাতা থাকলে তা কাঁচি দিয়ে আগেই কেটে নিন। এবার খোলা বইটি বন্ধ করে দিন। এতে পাতার মধ্যে থাকা পানি বইয়ের পাতা শুষে নিবে। আপনি চাইলে পেপার টাওয়ালও ব্যবহার করতে পারেন। পাতাটি থেকে ময়েশ্চার সরাতে কিছু সময় লাগবে, তাই অন্তত ৩-৪ ঘণ্টার মতো বইয়ের ভিতর চাপা দিয়ে রাখতে পারেন। অতঃপর কিছুটা সময় পরে খুব সাবধানে পাতাটি বইয়ের মাঝ থেকে সরিয়ে সাদা ম্যাট পেপারের উপর বসিয়ে তা মাস্কিং টেপ দিয়ে আটকে দিন। এবার পাতার নামটি চাইলে নিচের দিকে লিখে রাখতে পারেন। যেহেতু ফ্রেমে বসানোর প্ল্যান, তাই এখন পেপারটি একটি কাঠের ফ্রেমের গ্লাসের পিছনে বসিয়ে তা বাসার পছন্দমতো দেয়ালে ঝুলিয়ে দিন। এভাবেই চাইলে ঘরের ভিতরেও ফ্রেমের মাঝে একটু সবুজ ধরে রাখতে পারেন খুব সহজেই!
শুধু ফ্রেমের মাঝেই নয়, এখন ফুল-লতাপাতা থাকবে বইয়ের ভাঁজেও। একটি মোটা আর্ট পেপার বুকমার্কের সাইজে কেটে নিয়ে এর উপর কয়েক রকমের ফুলের পাপড়ি এবং পাতা ডিজাইন করে বসিয়ে দিন। এবার দুইপাশে দুইটি প্লাস্টিক শিট দিয়ে তা লেমিনেটিং করে নিন। ব্যাস, কাস্টমাইজড বুকমার্ক রেডি! এবার আর বইয়ের পাতা হারিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এর জন্য যা যা প্রয়োজন:
ফুল এবং পাতা দিয়ে কাস্টমাইজড কার্ড বানানোর জন্য এমন ফুল বা পাতা বেছে নেয়া উচিত যার পানি শুকিয়ে যাবে জলদি। এক্ষেত্রে ফুলগুলো যত রঙিন হবে তা দেখতে তত সুন্দর দেখাবে।
বরাবরের মতো ফুলগুলো শুকিয়ে নেয়ার জন্য প্রথমে কোন পুরনো বই বা পত্রিকার মাঝে আলাদা করে একেকটি ফুল নিয়ে তা টিস্যু পেপার দিয়ে হালকা করে চেপে নিন। এবার ফুল এবং পাতাগুলো বইয়ের পাতার মাঝে রেখে বইটি বন্ধ করে দিন। এবার অন্য মোটা বই দিয়ে এই বইটি চাপা দিয়ে রাখুন। এবার ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়ার জন্য আলো বাতাস আসে এমন জায়গায় ১ সপ্তাহের জন্য রেখে দিন।
কার্ড বানানোর জন্য কাঁচি দিয়ে ফুল-পাতা সুন্দরভাবে শেপ করে নিয়ে কী ধরনের ডিজাইনে বসাতে চান তা আগে ভেবে নিন। লে-আউট ঠিক হয়ে গেলে এবার সে অনুযায়ী আঠা এবং টুইজার দিয়ে তা কার্ডের উপরের অংশে বসিয়ে সারা রাত মোটা কোন বই চাপা দিয়ে রেখে দিন। পরবর্তীতে কার্ডের ভিতরের অংশে সুন্দর করে মেসেজ লিখে তা আপনার বন্ধু বা প্রিয় মানুষকে উপহার হিসেবে দিতে পারেন।
হালকা সোনালি রঙের বিভিন্ন ডিজাইনের পাতা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে সাজাবেন কিভাবে তা নিয়ে ভাবছেন? বসার ঘরের দেয়ালে যদি তাক করা থাকে, তবে সেই তাকের এক কর্নারে রাখতে পারেন বাড়িতে ব্যবহার না হওয়া এমন কোন কাঁচের বোতল। এক্ষেত্রে চা-কফির বোতল রিসাইকেল করতে পারেন। ব্যবহার পরবর্তী সেসব কাঁচের বোতলে কিংবা বাজার থেকে কিনে আনা কোন জার বা ফুলদানির মধ্যে ড্রাই ফুল এবং পাতা রেখে তা রুমের বিভিন্ন কর্নারে রাখতে পারেন। শীতের শুষ্কতা এবং সেই আমেজ ঘরের বাইরে যেমন থাকবে তেমনি, বসার ঘর কিংবা বেড রুমেও সেই আমেজ থাকবে পুরো শীতকাল জুড়ে।
ঘরের বাইরে হোক কিংবা ভিতরে ফুল আর পাতার সৌন্দর্য সবসময়ই বিশেষ। ঘর সাজাতে তাই এবার নিজেই না হয় বানিয়ে নিন দারুণ কিছু ক্র্যাফটস। শীত তো প্রায় চলেই এসেছে। শুকনো পাতা আর বিষণ্ণতার এই সময়টাতে নতুন কিছু বানিয়ে নিজের ক্রিয়েটিভ স্কিলের একটা ঝালাই কিন্তু করাই যায়। যেহেতু শীতের সময়টাতে গাছের পাতারা ঝরে যায়, তাই ঝরে যাওয়া সেসব পাতাকে ঘরে নিমন্ত্রণ জানানোর এখনই সময়! শীত কিংবা বসন্ত প্রকৃতির রঙে সাজুক ঘরের প্রতিটি কর্নার।