সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
একটা ডোর নেমপ্লেট বা ডোর নেম সাইন কিন্তু শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, বাড়িতেও খুব প্রয়োজনীয় আর মানানসই ব্যাপার। কাঠ, প্লাস্টিক, স্টিলসহ নানা ধাতুর তৈরি ডোর সাইন বেছে নিতে পারেন আপনি। পছন্দানুসারে সেটাকে বানাতেও পারেন নতুন করে। তবে ঘরে প্রবেশের পূর্বে যে ফলকটি আপনার ব্যক্তিত্ব আর গোটা আপনাকে ফুটিয়ে তুলবে একজন অতিথির কাছে, সেটা নিজের হাতে বানিয়ে ফেললে কেমন হয়? ঘরে বসে কিছু সাধারণ উপাদানে তাই নিজেই বানিয়ে ফেলুন ডোর নেম সাইন!
ঘরের দরজার ঠিক পাশে বা দরজার কোন একটি অংশে ঘরে বসবাসরত মানুষের নাম এবং পরিচয়সহ যে ফলকটি রাখা থাকে সেটাকেই ডোর নেম সাইন বলা হয়। এটি শুধু একজন মানুষের নামকে ফুটিয়ে তোলে না, তার পরিচয়কেও তুলে ধরে সম্পূর্ণ অজানা আরেকজন মানুষের কাছে। শুধু ঘরেই নয়, কর্মক্ষেত্রেও থাকতে পারে এই সাইন। হয়তো খেয়াল করলে বিভিন্ন দোকানেও ঝুলিয়ে রাখা ডোর সাইন দেখে পাবেন আপনি। তবে সেটার তুলনায় ডোর নেমপ্লেট বা ডোর নেম সাইন খানিকটা আলাদা, কারণ এতে একজন ব্যক্তি বা পরিবারের পরিচয়টাই ফুটিয়ে তোলা হয়। নানাভাবে ডোর নেম সাইন তৈরি করতে পারেন আপনি। চলুন না, কয়েকটি মুগ্ধ হওয়ার মতো ডোর নেম সাইন বানানোর পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক!
প্রথমে আপনার পছন্দসই কাঠ বেছে নিন। এরপর সেটাকে নিজের ইচ্ছানুসারে আকৃতি দিন। কাঠের মসৃণ অংশটি উল্টোপাশে রেখে অন্য অংশে পেরেক দিয়ে একইসমান ছোট্ট দুটো কাঠের টুকরো নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গেঁথে ফেলুন। ফলে এই অংশটি নেমপ্লেটটিকে দেয়াল বা দরজা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। পেছনে এই কাঠের ছোট্ট অংশে বড় দুটো পেরেক গেঁথে সেটাতে রঙিন দড়ি ঝুলিয়ে দরজার সামনে বা পাশে সাজিয়েও রাখতে পারেন আপনি। এটা যেমন আপনার নাম হতে পারে, তেমনই অতিথিকে স্বাগতম জানানোর প্রক্রিয়াও হতে পারে।
যদি একইসাথে কয়েকটি নাম লিখে ফেলতে চান আলাদা করে, তাহলে কাঠ আলাদা আলাদা কেটে, প্রত্যেকটির পেছনে বাড়তি পেরেক গেঁথে দিয়ে সেটা একই রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এবার পছন্দসই রঙ বা শুধুই বার্ণিশ দিয়ে কাঠের মসৃণ অংশটিকে রঙিন করে দিন। এবার রঙ শুকোতে সময় দিন। শুকিয়ে গেলে তার উপরে অন্য রঙ দিয়ে নাম, অভিবাদন ইত্যাদি লিখে ফেলুন। চাইলে কিছু ছবিও একে দিতে পারেন।
রঙ -এর ক্ষেত্রে অ্যাক্রোলিক পেইন্ট ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। তবে বাসার শিশুদের নিয়ে নানারকম রঙ-ও ব্যবহার করতে পারেন আপনি ডোর নেম সাইনে।
শুধু কাঠ কেন, মাটি দিয়েও ঠিক কাঠের মতোই ডোর সাইন বানিয়ে নিতে পারেন আপনি। তবে সেক্ষেত্রে মাটিকে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়ার পর চুলোর নিচে দিয়ে অনেকটা সময়ের জন্য তাপ পোহাতে দিতে হবে। এতে করে মাটি তাপে পুড়ে শক্ত হয়ে উঠবে এবং তাতে রঙ ব্যবহার করা সহজ হবে। মাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তাতে আংটা ঝুলিয়ে দিতে পারেন আপনি। পরে সেটাতে শিকল বা রঙিন দড়ি আটকে নিলেই হয়ে যাবে দারুণ ডোর নেম সাইন।
প্রাথমিক প্রক্রিয়া বাদে মাটির ডোর নেম সাইনের ব্যাপারটাও অনেকটা কাঠের ডোর নেম সাইনের মতোই।
কাঠ, মাটি এসব ভুলে যদি সহজ কিছু ভাবতে চান, তাহলে স্টিল বা প্লাস্টিক ইত্যাদির কথা ভাবতে পারেন। কিংবা একটু সাবধানে কাঁচকেও বেছে নিতে পারেন।
অনেকে এক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়ামকেও এগিয়ে রাখে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে ধাতব ডোর নেম সাইনটাই প্রাধান্য পায় বেশি। তবে হ্যাঁ, সবকিছু নির্ভর করছে আপনার উপরে। ইচ্ছে হলে বাড়িতে যেমন ধাতব ডোর নেমপ্লেট বসিয়ে দিতে পারেন আপনি, তেমনই বেছে নিতে পারেন কাঠ বা মাটির মতো প্রাকৃতিক উপাদানকেও।
বাড়িতে বসেই কাপড় আর তুলো দিয়ে সহজেই এই ডোর নেমপ্লেটটি বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনি। করতে পারেন নানারকম ডিজাইন। তবে আপনি চাইতে তুলোর বদলে শুধু কাপড়ের উপরেই সুতো দিয়ে নানারকম নকশা কেটে দিতে পারেন।
বাসায় হার্ডবোর্ড বা শক্ত কাগজ পড়ে আছে? সেগুলোকে কেটে, রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দরজার সামনে ঝুলিয়ে দিতে পারেন আপনি। খুব বেশি সাদামাটা মনে হলে কাগজের উপরে আঠা দিতে কাপড় বা কাগজের ফুল, পাতা আর পাখীও জুড়ে দিতে পারেন!
ডোর নেম সাইন নানারকম উপাদান দিয়ে আপনি তৈরি করতেই পারেন। তবে এছাড়াও জিনিসটাকে নিত্য নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনি। সেটা হতে পারে নেমপ্লেটের মাথায় ছোট্ট একটা কাপড়ের বো, কিংবা আলগা করে গুজে দেওয়া লতানো গাছ। বাড়ির নেমপ্লেট জুড়ে লতানো গাছ ছড়িয়ে যাচ্ছে, ভাবতেই কী অসম্ভব সুন্দর লাগছে, তাই না? তবে ভাবনায় আবদ্ধ থেকে নয়, এবার হাতে-কলমে কাজেই বসে পড়ুন। দরকারি উপাদান আর সামান্য কিছু রঙ দিয়ে নিজের বাড়ির ডোর নেম সাইনটিকে সাজিয়ে ফেলুন একদম নিজের মনের মতো করে!