By Sadia Islam Bristi
ঝর্ণা কি শুধু ঘরের বাইরেই মানানসই? একদম নয়! প্রকৃতিকে প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পেতে ছোট্ট আর মিষ্টি একটি ঝর্ণা আপনি বানিয়ে নিতে পারেন অন্দরমহলেই!
কল কল করে ঝরে পড়া পানির ধারা, পাথরে তার বয়ে যাওয়ার ছন্দ- ব্যস্ত নাগরিক জীবনে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দিতে যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, বহমান এই ঝর্ণাকে সম্পদ আর সফলতার উৎস বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাড়িতে ঝর্ণা নির্মাণের জন্য সবচাইতে সেরা স্থান মনে করা হয় বাগান বা দরজার বাইরের অংশটিকে। কর্মব্যস্ত দিনের শেষে প্রকৃতির সংস্পর্শে রাতে প্রশান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে ঝর্ণাকে স্লিপ থেরাপি হিসেবে বেডসাইড টেবিলেও রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা! ঝর্ণা তবে শহুরে বাড়িতে এতোটা ফাঁকা জায়গা পাওয়াটা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়।
কিন্তু তাতে কি হয়েছে? চলুন, ঘরের অল্প স্থানজুড়েই এবার ঝর্ণার ঠিকঠাক জায়গা নির্ধারণ করা যাক!
সাধারণত ঘরের ভেতরে তিন ধরণের ঝর্ণা তৈরি করা হয়। সেগুলো হলো-
টেবলটপ ঝর্ণা
ফ্লোর ঝর্ণা
ওয়াল-মাউন্টেড ঝর্ণা
প্রশ্ন হলো, ঘরের কোন স্থানে কেমন ঝর্না সবচাইতে বেশি মানাবে?
ফেং শ্যু বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরমুখী করে ঝর্ণা স্থাপন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এছাড়াও ঘরের কোথায় ঝর্ণা স্থাপন করবেন, কেমন ঝর্ণা ভালো দেখাবে ঐ স্থানে- ঝর্ণা তৈরির পূর্বে এই সবকিছুই বিবেচনা করে নেওয়া প্রয়োজন!
এমন ঘরোয়া ঝর্ণার চলটাই সবচাইতে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ঘরের একটা অংশ, বিশেষ করে- বসার ঘর, লবি, হলওয়ে ইত্যাদি কোন একটা স্থানে মেঝের সাথে লাগোয়া একটি অংশে পাথরের বা টেরাকোটার খোপ বানানো হয়। তারপর সেই খোপের মধ্য দিয়ে পানি বের হওয়ার ও চলে যাওয়ার পথ রাখা হয়। সাথে থাকে নানারকম পাথর এবং গাছ। সাধারণত এই ঝর্ণাগুলো চোখের জন্য যেমনি আরামদায়ক, তেমনি স্বাভাবিক চলাফেরার জন্যও বেশ ঝামেলাহীন!
একটি কাঁচের দেয়াল জুড়ে লম্বাটে ঝর্ণা বরাবরই অন্দরমহলকে আর বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। বাড়িকে সাজিয়ে তোলার জন্য এই ঝর্ণা ব্যবহার করা বেশ সহজও। সাধারণত ওয়াল ঝর্ণাগুলোর উপর ও নিচের অংশ তামা ও স্টিল ইত্যাদির মাধ্যমে বানানো হয়। আর মাঝখানের মূল অংশ জুড়ে থাকে কাঁচ, মার্বেল বা স্লেট। এগুলোর স্থাপনাও করা যায় খুব তাড়াতাড়ি। এই ঝর্ণার ক্ষেত্রে আপনি যেমন পুরো দেয়ালজোড়া ঝর্ণাকে বেছে নিতে পারেন, তেমনি দেয়ালের উপরের নির্দিষ্ট অংশ থেকে থেকে গড়িয়ে পড়া পানির প্রবাহকেও ঝর্ণা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পানির উৎস হিসেবে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি প্রাণীর মাথা বা অন্যান্য শিল্পকেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপরের প্রত্যেকটি ঝর্ণাই খুব দীর্ঘকালীন কিছু মনে হচ্ছে? তাহলে আপনার জন্য টেবলটপ ঝর্ণাই সবচাইতে বেশি কার্যকর। এই ঝর্ণা খুব সহজেই যেকোনো স্থানে আপনি বহন করতে পারবেন। ফলে একইস্থানে দীর্ঘসময় ধরে ঝর্ণা রাখার কোন প্রয়োজনই পড়বে না। জানালার পাশে বা ঘরের দরজার সামনে, এমনকি টেবিলের উপরেও পাথর দিয়ে কয়েকধাপে তৈরি এই ঝর্ণা চমৎকার মানাবে! ঝর্ণার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এর পাশে মোমবাতি এমং অন্যান্য জিনিসপত্রও রাখতে পারেন আপনি।
তবে এই সবগুলো ঝর্ণার ধরণই একদম প্রাথমিক। এর ভেতরেও এলইডি ঝর্ণা, বাঁশের ঝর্ণা, পাথরের ঝর্ণা, ধাতব, সিরামিক, ফাইবারের ঝর্ণা ইত্যাদি নানারকম ধরণ পাবেন আপনি।
ঘরের ঠিক বাইরেই, খোলামেল অংশে যদি ঝর্ণা রাখতে চান, সেটি আপনার ঘরের বাহ্যিক সৌন্দর্য্যকেও অনেকটা বাড়িয়ে তুলবে। দরজার ঠিক বাইরে ছাড়াও এক্ষেত্রে আপনি ঝর্ণা স্থাপন করতে পারেন বাড়ির বারান্দা, কিংবা ছাদে। সাধারণত, ফ্লোর ফাউন্টেন, টেবলটপ ফাউন্টেন বা ওয়াল ফাউন্টেন- এদের সবগুলোই এক্ষেত্রে বাগান বা ছাদ বারান্দায় মানিয়ে যাবে। গাছপালার ভেতরে পানির ধারা আর অনেক বেশি জীবন্ত করে তুলবে আপনার বাগানকে। তবে বারান্দার বাগানে মেঝে লাগোয়া বা টেবলটপ ফাউন্টেন ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। অন্যদিকে ছাদে যথেষ্ট স্থান থাকায় সেখানে মাঝারি আকারের দেয়াল ঝর্ণাও ব্যবহার করতে পারেন আপনি!
ঘরের ভেতরে থাকা ঝর্ণাকে আর বেশি প্রাকৃতিক ও মনোরম করে তুলতে নানারকম আনুষাঙ্গিক ব্যবহার করতে পারেন আপনি। এই যেমন-
ঝর্ণার ভেতরে ইচ্ছানুযায়ী নানারকম গাছ লাগাতে পারেন আপনি। এক্ষেত্রে যেমন ঝর্ণার ভেতরে মাটিসহ গাছের টব রাখা যায়, তেমনি পানিতে বেঁচে থাকে এমন গাছও সরাসরি ঝর্ণার ভেতরেই রাখতে পারেন আপনি। আর এজন্যই প্রয়োজন পড়ে নানারকম পাথর। এই পাথর শুধু যে ঝর্ণাকে দেখতে সুন্দর করে তোলে তাই নয়, একইসাথে গাছকেও টিকে থাকতে সাহায্য করে।
পাথর ও ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি নানারকম স্থাপনা, পুতুল ইত্যাদি ঝর্ণার পাশে এবং পানির ভেতরে রাখতে পারেন আপনি।
শুধু গাছ বা ভাস্কর্য নয়, ঝর্ণাকে আর বেশি প্রাণবন্ত ও প্রাকৃতিক করে তুলতে কিছু রঙ্গিন মাছ ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। সাথে থাকতে পারে আলোকসজ্জা। পানির কলকল, আর সাথে মাছের খেলা- দুটোই এক্ষেত্রে একসাথে উপভোগ করতে পারবেন আপনি।
কী ভাবছেন তাহলে? ঘরের নিরানন্দ আবহকে আনন্দময় আর অন্যরকম করে তুলতে এবার তাহলে পছন্দসই একটি ঝর্ণা বানিয়ে ফেলুন খুব কম খরচেই!