by Kazi Sadia Islam Roza
বর্তমান সময়ে শহরের প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ ভুগছেন ‘স্ট্রেস’ নামক একটি অদেখা অন্ধকারে। শহরে সবুজ নেই, পাখির ডাকের কোলাহল নেই, পার্কে বসে বাদাম খেতে খেতে আকাশের সাথে সময় কাটানো হয় না এখন আর কারো। তাই দু-দন্ড শান্তি এখন বনলতা সেন নয়, নিজের ঘরটিই এনে দেয় দিন শেষে।
প্রত্যাহিক এই ব্যস্ত জীবনে আমাদের সব থেকে আরাম, আয়েশ আর শান্তির স্থানটি হচ্ছে নিজের ছোট্ট সুন্দর ঘর। শহরের তীব্র যানজট, অফিসের ফাইল আর ই-মেইলের চাপ বা দৈনন্দিন সব শহুরে কোলাহল থেকে বেঁচে ফিরে এসে শান্তির একটি নিঃশ্বাস ফেলার এই আপন যায়গাটি আমাদের বাঁধানো শিকড়ের মত।
যতটুকু সময় নিজের ঘর, বারান্দা আর জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা আকাশের সাথে এক কাপ চা হাতে নিয়ে বা গান শুনে মেঘে মেঘে উড়ে কাটানো যায়, ততটাই প্রশান্তির হয়ে ওঠে মন।
খুব ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আর অভ্যাস আপনার বাসায় শান্ত একটি অবহাওয়া ছড়িয়ে দিতে পারে। দিন শেষে ঘরে ফিরে আপনার প্রতিটি মুহূর্ত-কে করে তুলতে পারে অনেক বেশি প্রশান্তির।
মানি প্লান্ট বা ছোট ছোট লতানো কিছু গাছ এনে রাখতে পারেন ঘরের ভেতর। পছন্দের ‘বনসাই ট্রি’-ও আনতে পারে চোখের প্রশান্তি। ফুলদানিতে প্রিয় কোন ফুল বা বারান্দার টবে প্রিয় কোন গাছের ছোঁয়া ঠিক একই ভাবে এনে দেবে পরিচ্ছন্ন অক্সিজেন আর প্রকৃতির নির্যাস।
সারা ঘর জুড়ে কড়া কোন আলো ব্যবহার না করে, কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্ট ব্যবহার করে ঘরকে আলোকিত করে তুলুন। এতে ঘর জুড়ে একটি হালকা আলো ছড়িয়ে যাবে, চোখ অনেক বেশি রিল্যাক্সড হবে। নানা রঙের হালকা আলো ব্যবহার করতে পারেন তবে ‘লাল’ বা কড়া নীল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। নিয়ন আলো ছড়িয়ে হালকা যে ছায়া রাখে ঘর জুড়ে, সেটিও মনকে অনেক রিল্যাক্সড করে। সাদা টিউবলাইট শুধু পড়ার ঘরেই ব্যবহার করা ভালো, কড়া আলোতে বেশি সময় থাকলে অনেক সময় তা মনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘরের কোণায় ছোট ছোট ল্যাম্প দিতে পারেন, বেডরুমের ঠিক মাঝ বরাবর কোন আলো ব্যবহার না করে, খাটের মাথার দিকে আলো ব্যবহার করুন , সাথে বেড সাইড টেবিল ল্যাম্প।
নিজের চোখে আরামদায়ক ও ঘরকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলতে পারে যে সব রঙ, সেগুলো ব্যবহার করুন।
ল্যাভেন্ডার, হালকা সবুজ, আকাশী নীল এবং হালকা ছাই রঙ – এদের মধ্যে অন্যতম কিছু শেইড। নিজের পছন্দ মত কোন আর্ট-ওয়ার্ক করে সেটি দেয়ালের রঙ-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘরকে করে তুলতে পারেন আরো অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই এখন একের অধিক টেলিভিশন, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ। সব সময়ই আমাদের দৃষ্টি কোন না কোন স্ক্রিনের চার দেয়ালে আটকে আছে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর যতটুকু সম্ভব এমন স্ক্রিনের ব্যবহার কমিয়ে আনলে স্ট্রেস-ও কমে যাবে অনেকখানি।
নিজের ঘরটিকে নিজের রুচি আর সাধ্যের মাঝে সাজিয়ে তুলুন। ঘরের সব প্রয়োজনীয় জিসিন যেন খুব সহজেই পাওয়া যায় এটি মাথায় রেখে, পরিকল্পনা করে ঘর-কে সাজান। অনেক বেশি আয়োজনের থেকে খুবই সাদামাটা ভাবে নিজের ঘরকে করে তুলন সর্বাধিক ব্যবহার উপযোগী।
এই অল্প কিছু ব্যাপার-কে মাথায় রেখেই আমরা পারি নিজের ঘরটিকে নিজের মনের বন্ধু করে তুলতে। ঘর আমাদের সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়, আর দিন শেষে এই আশ্রয়টি হয়ে উঠুক প্রশান্ত অনুভূতির উৎস।