ছাদে স্বস্তির নিঃশ্বাস - Berger Home Diaries
parallax background

ছাদে স্বস্তির নিঃশ্বাস

By Tasnim Jarin

প্রাণপ্রিয় শহরের অলিগলিতে মানুষ, চায়ের দোকান, রিক্সা-গাড়ির ভিড়- এক কথায় কোলাহলে ভরপুর। দালানকোঠার জঞ্জালে প্রাণ ভরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াটাই যে দায়, আর সেখানে নিজস্বতা কিংবা কিছু সময়ের শান্তি খোঁজাটা যে বিলাসিতা মাত্র।

কিছুদিন আগেরও শহরের এই চিত্রটা যে এখন একেবারেই ভিন্ন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা এ শহর এবং শহরের মানুষগুলোকে তাই এখন দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে ঘরবন্দী অবস্থায়। একদিকে শহরে চলছে লকডাউন, অন্যদিকে নিজেদের এবং অন্যকে সুস্থ এবং নিরাপদ রাখার জন্য আমরা পার করছি কোয়ারেন্টাইন জীবন। এ সময় একমাত্র খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আর তাই তো চার দেয়ালের মাঝেই চলছে সাহিত্য চর্চা, গিটারের তারে টুংটাং করে গান তোলার প্রয়াশ, নয়তো এক রুম থেকে অন্য রুমে উদ্দেশ্যহীন মনে পায়চারী করেই কাটছে আমাদের সময়। জানালার শিক ধরে বৃষ্টি হলে আকাশ দেখা কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুই বাড়ির মাঝে যতটুকু আকাশ দেখা যায়, তাতেই তারা গোনার অক্লান্ত পরিশ্রম যেন মাঝে মাঝে মনকে বিষণ্ণ করে তোলে। আর এসবের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার আগেই একটা উপায় বের করা যে অত্যন্ত প্রয়োজন।

শহুরে ঘরবন্দী জীবনে আটকে না থেকে আকাশের দিকে ঘণ্টাখানেক তাকিয়ে থাকার জন্য একটা ব্যবস্থা করা যে বিশেষ প্রয়োজন, তা না হলে বাসায় থাকার মুহূর্তগুলো যে একসময় ক্লান্তিকর হয়ে উঠবে। পাখির মতো ডানা মেলে আকাশে ঘুরে বেড়ানোর স্বাদ পূর্ণ না হলেও, মাথার উপরে থাকা ছাদটা যে হতে পারে এই লকডাউনের সময় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ার একমাত্র আশ্রয়স্থল।

ছাদ- যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, সাজিয়ে নেওয়া চাই একদম নিজের মনের মতো করে। এক্ষেত্রে সবার প্রথম খেয়াল রাখতে হবে আবহাওয়ার পরিক্রমায় রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, এই তিন অবস্থার কথা। কেননা আপনি যেভাবেই ছাদ সাজানোর পরিকল্পনা করেন না কেন, এই তিন অবস্থার সম্মুখীন আপনাকে হতেই হবে। আর তাই আসবাব থেকে শুরু করে গাছ সব কিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাখা চাই।

কীভাবে সাজাবেন ছাদ?

নগর জীবনে সবুজের দেখা মেলা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দালানকোঠার ভিড়ে গাছের দেখা তো পাওয়াই যায় না, এদিকে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনও যে প্রয়োজন। আর তাই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে আপনার ছাদটা হতে পারে ছোট্ট সবুজের রাজ্য।

বাগানবিলাস, বেলি, কারনেশন, চন্দ্রমল্লিকা, ক্যারিওপসিস, কসমস, ডালিয়া, লুপিন, জারবেরা, গাঁদা, জিনিয়া, জারবেরা ফুল থেকে আপনার পছন্দের ফুলের গাছ লাগিয়ে নিন ছাদের দুই পাশ জুড়ে। ঠিকমতো যত্ন নিতে থাকলে, একটা সময় দেখবেন রঙিন ফুলে ছাদটা যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।     

প্রতিদিনের এই ক্লান্তিকর জীবন থেকে কিছুটা সময় বের করে প্রকৃতির মাঝে কাটাতে চাইলে এর থেকে উত্তম উপায় আর কিছু হতেই পারে না। শরীর এবং মন এ দুইয়ের রিচার্জের জন্য তাই ছাদটিকে গড়ে তুলুন একদম নিজের মতো করে। এক্ষেত্রে ছাদের দেয়ালের পাশ জুড়ে রাখা ফুলের গাছগুলো থেকে কয়েক হাত দূরে একটা বসার ব্যবস্থা করুন।

যেহেতু ঝড় বৃষ্টি হুটহাট করেই চলে আসে, তাই ছাদে রাখা আসবাবগুলো অবশ্যই পানিরোধী হতে হবে। এক্ষেত্রে প্লাস্টিক মেটারিয়ালের চেয়ার ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে রড আয়রনের আসবাব হলে এমন রঙ ব্যবহার করা উচিত, যা পানিরোধী এতে ঝড়-বৃষ্টিতে চেয়ার-টেবিল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে। চার সিটের রড আয়রনের কাউচের মাঝে রাখা টেবিলের ফুলদানিতে রাখুন বাগানের কিছু তাজা ফুল, শোপিস, লুডু কিংবা দাবার বোর্ড।

টেবিলের দুই পাশে একটি বা দুইটি বিন ব্যাগ রাখতে পারেন, যেন আরাম করে বসে বই পড়তে পারেন। সাথে থাকবে রঙিন কয়েকটি কুশন, যা ফ্লোরেও রাখতে পারেন আরাম করে পা রাখার জন্য। এছাড়া দোলনা রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে, দোলনা অথবা রকিং চেয়ার রাখতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে অবসর সময়ে বই পড়তে পড়তে একটু ঘুমিয়েও নিতে পারবেন।

তবে এসব কিছুর আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ছাদে বসার এ জায়গায় একটা ছাউনি বা শেড-এর ব্যবস্থা করা যা রোদের তাপ এবং আলো থেকে আপনাকে আড়াল করে রাখবে। এক্ষেত্রে ভালো হয় যদি আপনি প্লাস্টিক শেড ব্যবহার করেন, যা বৃষ্টির সময়ও আপনার আসবাবগুলোকে বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে, আর আপনিও ছাদে বসে নিশ্চিন্ত মনে বৃষ্টি উপভোগ করতে পারবেন।  

আপনার সাজানো ছাদটির সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করে তুলতে স্ট্যান্ড ল্যাম্প, হারিকেন বাতি কিংবা মরিচ বাতির যেন কোনো তুলনাই হয় না। ছাউনি বা শেডের প্রত্যেক কোণায় ঝুলিয়ে দিন হারিকেন বাতি, আর ফুল গাছের পেছনের দেয়াল সাজিয়ে তুলুন মরিচ বাতি দিয়ে।

এক্ষেত্রে পছন্দমতো একটি রঙ যেমন নিয়ন, সাদা বা হালকা সোনালি রঙ বেছে নিতে পারেন, অথবা দুইটি রঙের কম্বিনেশনেও ছাদ সাজিয়ে নিতে পারেন। যেটাই করুন না কেন, পুরো ছাদ জুড়ে যেন অদ্ভুত এক মায়া আপনাকে ঘিরে রাখবে, আর দূরের হারিকেন বাতি তো থাকছেই ছাদের প্রহরী হয়ে। এছাড়া বিন ব্যাগ বা রকিং চেয়ারের পাশে স্ট্যান্ড লাম্পও রাখতে পারেন, সুন্দর দেখাবে।

এছাড়া ছাদটি আরও নিত্যনতুন করে তুলতে চাইলে ইট-বালি-সিমেন্ট দিয়ে ছাদে ফিক্সড বসার জায়গা করে নিতে পারেন। বসার এই চেয়ার এবং টেবিল পরবর্তীতে পছন্দের রঙে এবং নকশায় নিজেই ডিজাইন করে নিন। অন্যদিকে কাঠের বিভিন্ন আকৃতির পাত্র বানিয়ে, তার মধ্যে ফুলের গাছ বসিয়ে দিতে পারেন।

এতে একদিকে দেখতে যেমন স্মার্ট লাগবে, অন্যদিকে সবকিছু অনেক গোছানো মনে হবে। আর এসবের সাথে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ছাদে রাখা আসবাব-সহ প্রত্যেকটি জিনিস যেন রঙিন হয়। যেন অবসাদ কিংবা বিষণ্ণতা এত সব রঙের মাঝে হারিয়ে যায় অনেক দূরে।     

  •  
  •  
  •  
  •   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *