ঘর সাজুক গাছে গাছে! - Berger Home Diaries
parallax background

ঘর সাজুক গাছে গাছে!

By Sadia Islam

শীত তো প্রায় শেষের পথে। কয়েকদিন বাদেই চলে আসবে গ্রীষ্মকাল। তবে শীত হোক বা গ্রীষ্ম, গাছ সবসময় সব মৌসুমেই আমাদের চিরচেনা ঘরটিকে আরো বেশি আরামদায়ক আর আকর্ষণীয় করে তোলে। নিজের ছোট্ট ঘরটিকে অনেকদিন ধরেই নানারকম গাছে ভরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন? চলুন না, এক পলকে ভিন্নরকম ঘর সাজানোর গাছ, সেগুলো সাজানোর কৌশল এবং আরো কিছু দরকারি টুকিটাকি জেনে নেওয়া যাক!

ঘর সাজুক নানান গাছে!

ঘর সাজাতে কোন গাছটি বাছবেন?

ঘরের জন্য গাছ বাছার ক্ষেত্রে কোন গাছটি বারান্দার জন্য এবং কোন গাছটি ঘরের ভেতরে রাখার জন্য ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণ করে ফেলুন। কিছু গাছ ছায়ায় ভালো থাকে, কিছু গাছের আবার রোদ না হলে চলে না। খুব বড় আকারের গাছ না বেছে নিয়ে আকৃতিতে ছোট এবং শোভাবর্ধন করে এমন গাছ কিনুন। আমাদের শরীরের জন্য সবগুলো গাছই যে সমান ভালো তা নয়। তাই ঘরের জন্য গাছ কেনার আগে সেই গাছের উপকারী দিক নিয়েও কিছুটা পড়াশোনা করে ফেলুন।

শোভাবর্ধনকারী গাছ ব্যবহার করুন

ঘরভেদে গাছের রকম

ঘরের জন্য কোন গাছগুলো বাছবেন তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা তো করা হলো। কিন্তু কোন ঘরের জন্য কোন গাছটি বাছবেন তা কি ভেবেছেন? চলুন, জেনে নেওয়া যাক আপনার কোন ঘরের জন্য কোন গাছটি যুতসই!

বসার ও শোবার ঘর

বসার বা শোবার ঘরে শোভা বাড়ায় এমন গাছ রাখুন। তবে শোবার ঘরের জানালায় ইচ্ছে হলে ঝুলন্ত টব রাখতে পারেন আপনি। জানালার গ্রিল থাকলে সেখানে কিছু লতানো গাছকেও জড়িয়ে রাখতে পারবেন। এতে করে প্রচন্ড গরমেও আপনার ঘরটি থাকে বেশ শীতল।

শোবার ঘরে মাটির টবে অনেকগুলো গাছ একসাথে রাখতে পারেন।

এছাড়া ঘরের কোনায় ৪-৫ ফুট লম্বা গাছও রাখতে পারেন। শোবার ঘরে সবচাইতে কম খরচে মানিপ্ল্যান্ট গাছ মাটিতে লাগাতে পারেন আপনি। মানিপ্ল্যান্ট গাছ যেমন পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়, তেমনি মাটিতেও লাগানো যায়। আর সূর্যের আলো দরকার না হওয়ায় এর যত্নও করতে হয় কম। যদি আপনি খুব শৌখিন হয়ে থাকেন, তাহলে মাটির চাড়িতে কচুরিপানা এবং শাপলার মতো গাছগুলোও লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে করে শুধু যে আপনার ঘর দেখতে সুন্দর লাগবে তাই নয়, একইসাথে চোখ আর মন- দুটোরই আরাম পাবেন আপনি।

খাবার ঘর

খাবার ঘরে একটু বাড়তি পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার চিন্তা সবার মাথাতেই থাকে। সেজন্যই ডাইনিং টেবিল বা ফ্রিজের উপরে কয়েকটি ক্যাকটাস গাছ লাগিয়ে নিতে পারেন আপনি। মাটি থেকে যেন ধুলো না ছড়ায় সেটা নিশ্চিত করতে স্নেকপ্ল্যান্ট বা পানিতে বাচে এমন গাছও রাখতে পারেন।

খাবার ঘরে ক্যাকটাস রাখুন!

বারান্দা

বারান্দায় আলো, রোদ ও বাতাস বেশি আসে। তাই এখানে সব রকমের গাছ লাগাতে পারেন আপনি। একটা ছোট্ট জলাশয় বানিয়ে সেটার চারপাশে নানারকম জলজ গাছ রাখুন। টব নানারকমের হতে পারে। সেটা যেমন মাটির হয়, তেমনি হয় প্লাস্টিকেরও। এমন টব কিনুন যেতার নিচে ছিদ্র আছে। এতে করে পানি টবের মাটিতে জমে থাকবে না।

এছাড়া, ঘরের দরজা এবং লিফটের সামনেও বড় এবং মাঝারি আকারের গাছগুলো রাখুন। এতে করে আপনার ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হলো, বারান্দায় তো নানারকম গাছ লাগাতে পারবেন আপনি। কিন্তু, ঘরের ভেতরে অনেক দিন সূর্যের আলো ছাড়াই ভালো থাকবে এমন গাছ পাবেন কীভাবে? চলুন, এমন ঘরে লাগানোর জন্য ঠিকঠাক কিছু গাছের নাম ও দরদাম জেনে নেওয়া যাক। এক্ষেত্রে-

  • মানিপ্ল্যান্ট
  • ক্যাকটাস
  • চাইনিজ এভারগ্রীন
  • স্পাইডারপ্ল্যান্ট
  • পিস লিলি
  • লাকি ব্যাম্বু

রাবার প্ল্যান্ট ইত্যাদি গাছগুলো সূর্যের আলো ছাড়া অনেকটা সময় ধরে ভালো থাকবে আপনার ঘরের ভেতরে। মোটামুটি ৩০-১৫০ টাকার মধ্যেই আপনার পছন্দসই সবগুলো গাছ কিনতে পারবেন আপনি। তবে গাছ ছাড়াও এক্ষেত্রে আপনার আরো লাগবে মাটি ও টব। মাটির দাম ৭০-১০০ টাকার মধ্যে হলেও টবের দামে আছে অনেক ভিন্নতা। মাটি, প্লাস্টিক বা অন্যান্য উপকরণের উপর নির্ভর করে টবের দাম ভিন্ন হবে। তবে এই টব আপনি ৩০ থেকে ৭০০/১০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

ঘরের ভেতর পদ্মফুল!

কার্জন হল, ধানমন্ডি, বখশিবাজার রোড, আগারগাঁ ছাড়াও গুলশান, বনানী, মিরপুর ইত্যাদি স্থানের স্থানীয় নার্সারীগুলো থেকে সহজেই এই সবগুলো উপকরণ কিনতে পারবেন আপনি। বর্তমানে অনেক অনলাইন শপ থেকেও প্রয়োজনীয় এই সবকিছু কেনা যাবে।

গাছে পানি দেওয়ার টুকিটাকি

বাড়ির যে গাছগুলো পানিতেই রাখা আছে সেগুলোর পানি প্রতি ২-৩ দিন পরপর বদলে ফেলুন। এছাড়া অন্য গাছগুলোতে পরিমাণমতো পানি ঢালুন। যদিও চারাগাছের বড় গাছের তুলনায় বেশি পানি প্রয়োজন, তবে চেষ্টা করুন কোন গাছেই বেশি বা কম পানি না দিতে। অতিরিক্ত পানি গাছে যেন না দেওয়া হয় তা বুঝতে একটি কাঠি টবের মাটিতে পুঁতে রাখুন। পানি ঢালার পর সেটা বের করে দেখুন। যদি কাঠি পুরোটা ভিজে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে পানি গাছের গোড়ায় পৌঁছেছে। টবে ছিদ্র রাখুন যেন বাড়তি পানি টব থেকে পড়ে যায়।

আর চেষ্টা করুন সকালে ও বিকালে, যখন রোদের আলো কম থাকে, সেসময় গাছে পানি দিতে। অনেকসময় গাছের গোড়ায়, পানিতে মশা ও অন্যান্য পোকা জন্ম নেয়। এই সমস্যা দূর করতে এক গ্যালন পানি নিয়ে তাতে অ্যাসপিরিন গুলিয়ে নিন এবং গাছের গায়ে মাঝেমধ্যে স্প্রে করুন। নিয়মিত সময়ভেদে গাছের ডালপাতাও ছেঁটে দিন।

টিপস

  • ঘরের ভেতরে থাকা গাছ নিয়মিত ছাঁটবেন। অবশ্যই খুব বেশি বড় হতে দেবেন না।
  • অতিরিক্ত আলোর নিচে এই গাছ রাখবেন না। খুব বেশি পানিও দেবেন না।
  • প্লাস্টিক নয়, মাটির টবকে বেশি প্রাধান্য দিন।
  • গাছ লাগানোর আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন। অ্যালার্জি বা অ্যাজমার মতো সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য ঘরে এমন ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা থেকে বিরত থাকুন।
  • বাড়ির বাইরে বেড়াতে গেলে গাছটিকে পাতলা পর্দার আড়ালে রোদের আলোর কাছাকাছি রাখুন। এতে গাছ রোদ পাবে। আবার পুড়েও যাবে না। গাছের গোড়ায় আর্দ্রতা বজায় রাখতে পলিমার জেল, ক্রিস্টাল, টবের তলায় প্লাস্টিকের আবরণ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। গাছকে শুধু ঠান্ডা জায়গায় রাখলেই হবে না, সেগুলোকে কাছাকাছি রাখুন। এতে করে তারা একে অন্যের মধ্যে আর্দ্রতা সরবরাহ করতে পারবে।
  • নিয়মিত গাছের যত্ন নিতে সঠিক পরিমাণে পানি দিন, গাছকে আর্দ্র স্থানে রাখুন। তবে একইসাথে প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা রোদের আলোতেও রাখার চেষ্টা করুন।

ব্যস! সব তথ্য তো জানা হয়েই গেলো। তাহলে কী ভাবছেন? ঘরের জন্য গাছ কেনা কবে থেকে শুরু করছেন?

  •  
  •  
  •  
  •   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *