By Tasnim Jarin
ঘরের সৌন্দর্য রক্ষা কিংবা গোপনীয়তা, পর্দা ছাড়া ঘর সাজানো যেন অপূর্ণই রয়ে যায়। আর সেই পর্দা যদি হয় ঘরের দেয়ালের সাথে মানানসই, তবে তো কথাই নেই! আপনার সাজানো-গোছানো স্বপ্নের সেই ঘরটি যেন আরও আপন হয়ে ওঠে প্রতিনিয়তই। যেখানে আপনি কাটাতে পারেন শান্তির কিছু মুহূর্ত একদম নিজের মতো করে; নিশ্চিন্তে, নিরালায়।
তো বাজারের হরেক রঙের পর্দার ভিড়ে, কোনটা যে আপনার ঘরের দেয়ালে মানাবে, আর কোনটা দেখাবে বেমানান, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন? বিষয়টা কিছুটা জটিল মনে হলেও, অতটা জটিল কিন্তু নয়! শুধু একটু হিসাব মিলিয়ে নিলেই কিন্তু দেয়ালে পর্দা সাজবে একদম মনের মতো করে!
প্রথমে শুরু করছি বসার ঘর বা ড্রয়িং রুমের দেয়ালটি দিয়ে, ছিমছাম এই ঘরটির দেয়াল সাজানো চাই এমন পর্দা দিয়ে যা আপনার ঘরকে রাখবে আলোকিত এবং উজ্জ্বল। ঘরের আসবাবপত্রের ভিড়ে রুমটি যেন অন্ধকার না দেখায়, সেজন্য হালকা রঙের পাতলা পর্দাই হবে এই রুমের দেয়ালের জন্য মানানসই। এক্ষেত্রে সাদা কিংবা অফ-হোয়াইট রঙের সিনথেটিক কাপড়ের পর্দা বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে দেয়ালের সাথে পর্দার রঙ যেন হুবুহু মিলে না যায় সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
এবার আসি খাবার ঘরের কথায়, এই ঘরের দেয়ালের জন্য উজ্জ্বল রঙের পর্দা বেছে নিতে পারেন। সাধারণত খাবার ঘরটি থাকে রান্নাঘরের পাশে, আর এই রুমে যদি রোদের তাপের আনাগোনা বেশি থাকে, তবে শান্তিমতো আহার করা সম্ভব হবে না। তাই দেয়ালের আকৃতি এবং রঙ বুঝে বাদামী, লালচে কমলা, মেরুন কিংবা চকোলেট রঙের প্রিন্টের পর্দাও কিন্তু খারাপ দেখাবে না ডাইনিং রুমের দেয়ালে।
বাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুমটি হলো শোবার ঘর। সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই চলে যায় শোবার ঘরে প্রবেশের সাথে সাথে। আর তাই শোবার ঘরের দেয়ালের জন্য চাই কিছুটা ভারী, তবে সুতি কাপড়ের পর্দা। ঘরে একদিকে যেমন বাতাস ঢোকা চাই, তেমনি গোপনীয়তা রক্ষাও পাবে সমান গুরুত্ব। তাই পর্দা বাছাইয়ে হালকা গোলাপি, সবুজ, আকাশী কিংবা পিচ রঙ হতে পারে পর্দার জন্য পারফেক্ট।
এক্ষেত্রে দুই স্তরের পর্দাও ব্যবহার করতে পারেন। সামনে কিছুটা মোটা ধরনের কাপড়ের পর্দা ঝুলিয়ে তার পিছনে ভিন্ন রঙের নেটের পর্দা টাঙিয়ে দিলে ঘরটি দেখতে আরও সুন্দর দেখাবে। সাধারণত নেটের পর্দা সাদা রঙের হলেই তা দেখতে সুন্দর দেখায়। তবে অফ হোয়াইট, বাসার সবচেয়ে ছিমছাম এই রুমটিতে যেন শান্তি এনে দিয়ে নেটের এই পর্দা। একদিকে যেমন রুমের গোপনীয়তা বজায় রাখবে, অন্যদিকে রুমে আলো-বাতাসের সুব্যবস্থাও করে দিবে।
চাইলে নেটের পর্দাটি দুই পাশে বেল্ট দিয়ে হালকা করে বেঁধেও রাখতে পারবেন, এতে করে রুমে কিছুটা ভিন্নতাও আসবে, সাথে বাতাসের প্রবেশ তো থাকছেই।
অন্যদিকে, বাচ্চাদের ঘরের দেয়ালের জন্য পর্দা হওয়া চাই উজ্জ্বল রঙের। কার্টুন প্রিন্টেড পর্দা দেখে বাচ্চারা যেমন খুশি হয়ে যাবে, তেমনি শৈশবের এই সময়টাও হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত।
তবে দেয়ালের জন্য পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো ঘরের রঙ এবং আকৃতি। দেয়ালের রঙ এবং পর্দা যেন কখনোই একই রঙের না হয় এই বিষয়টি বিশেষ নজরে রাখতে হবে। ঘরের আকৃতি যদি ছোট হয় এবং আসবাবপত্রের সংখ্যাও যদি বেশি হয়ে থাকে, তবে গাঢ় রঙের প্রিন্টের পর্দা বেছে না নিয়ে, হালকা এক রঙের পর্দা বেছে নিতে পারেন।
ঢাকার মধ্যে নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, মোহাম্মদপুর, রোকেয়া সরণি, গুলশান, মিরপুর ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাবে পর্দার বিশাল সংগ্রহ। আপনি চাইলে পছন্দমতো কাপড় কিনে লেইস, বোতাম দিয়ে ডিজাইন করে বানিয়ে নিতে পারেন রুমের জন্য মানানসই পর্দা। এক্ষেত্রে পর্দার সঠিক মাপ জেনে নেওয়া জরুরি।
কাপড়ভেদে পর্দা প্রতি পিস ৮০০-৯০০ থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর গজ হিসেবে কিনতে চাইলে গজ প্রতি ৪০০-৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত পড়তে পারে।
অন্যদিকে টারসেলের দাম পড়বে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং টারসেল স্ট্যান্ডের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। সুতি অথবা খাদি কাপড়ের এসব পর্দায় ব্লক, বাটিক অথবা হাতের কাজ করা থাকে। প্রতিটির দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
হোম টেক্স প্রতিটি পর্দার দাম পড়বে ৬৫০-৪৯০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে কে ক্রাফট, অঞ্জন’স কিংবা আড়ং-এ প্রতিটি পর্দার দাম পড়বে ৭০০-১৬০০ টাকার মধ্যে, যদিও ডিজাইন এবং কাপড় ভেদে এই দামের তারতম্য দেখা দিতে পারে।
তবে আপনি যদি একটু কম খরচের মধ্যে কাপড় কিনে নিজেই পছন্দমতো ডিজাইন অনুযায়ী পর্দা বানিয়ে নিতে চান, তবে এর জন্য পারফেক্ট জায়গা হবে নিউমার্কেট। এখানে আপনি অনেক ধরনের গজ কাপড়ের সন্ধান পাবেন। সুতি চেক কিংবা শেডের কাপড় থেকে শুরু করে সিনথেটিক, নেট এমনকি বিভিন্ন প্রিন্টের কাপড়ের দেখা মিলবে নিউমার্কেটে। যার দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ বা তার বেশিও হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুটা দরদাম করেই কাপড় কিনতে হবে। ভালো হয় যদি আগেভাগেই আপনি জেনে নিতে পারেন যেকোনো কাপড়ের দাম কেমন হতে পারে, তবে যাচাই-বাছাই করে কাপড় কিনতে সুবিধা হবে।