By Tasnim Jarin
ঘর সাজাতে পর্দা, আসবাব, রঙ এসব কিছুর সাথে যে জিনিসটা না হলেই নয়, তা হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা। ঘরে প্রাকৃতিক আলো আসবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাকৃতিক আলোর পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করে তুলতে বাসার বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয় ল্যাম্প, ফোকাস লাইট কিংবা ডেকোরেশন লাইট। অসাধারণ সুন্দর সেসব আলো যেন ছোট-বড় যেকোনো ধরনের বাসাতেই একটা স্পেশাল লুক এনে দেয়। অন্দরের সাজসজ্জায় অন্য সব কিছুর পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার চেষ্টায় আমরা কত ধরনের পরিকল্পনাই না করে থাকি। শৌখিনতার সাথে ঘরের ভিতরের এবং বাইরের সৌন্দর্য ধরে রাখতে তাই সাজানোর অন্য সব আইটেম এর সাথে এবার যুক্ত করে দিতে পারেন দারুণ কিছু লাইটস। নিত্যনতুন সব লাইট দিয়ে আপনার ঘরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে একেক রুম এবং কর্নার বুঝে কিনে ফেলুন ল্যাম্প কিংবা লাইট শেডস।
আধুনিক সময়ে যে ধরনের লাইট দিয়ে সাধারণত ঘর সাজানো হয় এর মধ্যে ঝাড়বাতি, জেনারেল, টাস্ক এবং একসেন্ট লাইট ছাড়াও রয়েছে অনেক ধরনের ফ্যাশানেবল লাইট। বাসার প্যাসেজ থেকে শুরু করে লিভিং রুম, বেড রুম, ড্রইং রুম সব জায়গার জন্যই যা বেশ মানানসই। এছাড়া অত্যাধুনিক সব ল্যাম্প, স্ট্রাইপ লাইটস, মরিচবাতি এবং স্মার্ট লাইটস তো রয়েছেই।
সাধারণত বড় রুমের বাসার লাইটিং এর জন্য ঝাড়বাতি বেশ দারুণ একটি অপশন। বিশেষ করে ড্রইং রুম, লিভিং রুমের সিলিং এর জন্য এই ঝাড়বাতি ব্যবহার করা হয়। তবে মাঝারি ধরনের বসার ঘরের জন্য ছোট আকারের ঝাড়বাতি বেছে নেয়া যেতে পারে। বিভিন্ন আকৃতি এবং নকশার ঝাড়বাতি ঘরের চিত্রই পাল্টে দেয়। বিশেষ করে অতিথির আগমনে ঘরে জমকালো ভাব আনতে বা ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় একটি ঝাড়বাতির আলোই যেন ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে যথেষ্ট। এমনকি ডুপ্লেক্স বাড়ির ক্ষেত্রে সিঁড়ি বরাবর অংশেও এই ঝাড়বাতি লাগালে তা দেখতে বেশ দারুণ দেখায়। আধুনিক সময়ে এসেও তাই অন্যান্য লাইটের সামনে এর চাহিদা এবং ঝলমলে আলো একটুও ম্লান হয়নি।
সাধারণ এলইডি লাইট ঘরের প্রতিটি কোণে আলো পৌঁছে দিতে না পারলেও, একসেন্ট লাইট রুমের বিশেষ জায়গায় ফোকাস লাইট হিসেবে কাজ করে। ঘরের কোণ কিংবা একটি নির্দিষ্ট জিনিসকে হাইলাইট করার জন্যই মূলত একসেন্ট লাইট ব্যবহার করা হয়। দেয়ালে লাগানো পেইন্টিং, স্কাল্পচার, গাছ বা দারুণ কোন শোপিস এর উপর এই লাইট এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এছাড়া লম্বাটে, গোল বা ওভাল ধাঁচের পেনডেন্ট লাইট সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিলেও তা দেখতে বেশ সুন্দর দেখায়। এক্ষেত্রে রুমের আকৃতির উপর নির্ভর করবে লাইট কতটা বড় বা ছোট হবে এবং ঠিক কোন অংশে তা ঝুলিয়ে দিতে হবে। শোবার ঘর, লিভিং রুম, ডাইনিং, সিঁড়ি কিংবা রান্নাঘরের কাউন্টারটপে এই লাইট লাগানো যেতে পারে।
ঘরের সব জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা রাখতে জেনারেল লাইট ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের লাইট ডেকোরেশন কম, দরকারেই মূলত লাগানো হয়। একসেন্ট লাইট ছাড়া আরও রয়েছে টাস্ক এবং জেনারেল লাইট। জেনারেল লাইট সাধারণত টেবিল বা ফ্লোর ল্যাম্প, সিলিং লাইট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ড্রেসিং টেবিলের উপর ড্রইংরুমের কর্নারের জন্য রয়েছে স্পট লাইট, এলইডি ওয়াল ব্রাকেট বা ফোকাস লাইট যা পুরো রুমে এক ধরনের মায়াবী আলোয় আলোকিত করে দিবে।
ঘরে আলোর ব্যবস্থা করতে আরেকটি বেশ জনপ্রিয় উপায় হল ল্যাম্প এর ব্যবহার। ঘরে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে ল্যাম্প অন্যতম। আধুনিক সময়ে ঘর সাজানোর তালিকায় অন্যান্য লাইটিং সিস্টেম এর পাশাপাশি টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর বা স্ট্যান্ড ল্যাম্প, হ্যাঙ্গিং ল্যাম্প ইত্যাদির বেশ চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন ডিজাইন এবং আকৃতির এই ল্যাম্প ঘরের বিভিন্ন কোণে রাখা যায়। তবে কোন কর্নারে কোন ডিজাইনের ল্যাম্প মানাবে তা আসলে নির্ভর করবে রুমের আকৃতি এবং কী উদেশ্যে রাখা হচ্ছে তার উপর। এমনকি ল্যাম্পের আলোও হতে পারে বিভিন্ন রকমের। তবে বেড রুমের সাইড টেবিল, ড্রইং রুমের সোফার পাশে কিংবা কর্নারে এবং স্টাডি রুম বা লিভিং রুমে এই ল্যাম্পের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে, তা ডেকোরেশন কিংবা প্রয়োজন যেকোনো কারণেই হতে পারে।
আকার-আকৃতি এবং ডিজাইন ভেদে লাইট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এমনকি লাইট কী কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করবে বাসার কোন জায়গার জন্য কী ধরনের লাইট কিনতে হবে।
ফ্যাশানেবল লাইটের মধ্যে বাসার ডেকোরেশনের জন্য স্ট্রাইপ লাইট ব্যবহার করা যায়। এই লাইট বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। মিটার হিসেবে এই লাইটের দাম নির্ধারণ করা হয়। যার দাম প্রতি মিটারে ১৩০ টাকা থেকে শুরু হয়। এ ধরনের লাইট দেয়াল, শেলফ কিংবা জানালার পাশ সাজাতে লাগানো হয়ে থাকে।
ফোকাস লাইট, পেনডেন্ট বা একসেন্ট লাইট বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনে পাওয়া যায়। যার দাম ১-২ হাজার থেকে শুরু করে অনেক দামেরও হতে পারে। এ ধরনের লাইটে হোল্ডার একবার সেট করে ফেলার পর, শুধুমাত্র লাইট চেঞ্জ করেও দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া সাধারণ সিলিং লাইট বা এলইডি লাইট কিনতে হলে এর দাম ওয়াট এর উপর নির্ভর করবে। ওয়ারেন্টিসহ এ ধরনের লাইট ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। যদিও ডিজাইন এবং আকারভেদে দামের তারতম্য দেখা যাবে।
বাড়ির সামনের বাগান, বারান্দা কিংবা ছাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ কিছু গার্ডেন লাইট। এই লাইটগুলো সাধারণত ওয়াটারপ্রুফ হয়ে থাকে। তাই ঝুম বৃষ্টিতেও আপনি দিব্যি এই আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারবেন। এ ধরনের লাইটের দাম ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
ঢাকায় লাইট কিনতে আপনাকে যেতে হবে চকবাজার, গুলিস্তান, গুলশান, খিলগাঁ, ফার্মগেটসহ, নিউমার্কেট এলাকায়। তবে যদি আপনি খুচরা মূল্যে কিনতে চান, তবে অবশ্যই হাতে কিছুটা সময় নিয়ে চকবাজার কিংবা গুলিস্তানের স্টেডিয়াম চত্বরে চলে যেতে পারেন। এখানে আপনি লাইটের অনেক দোকান পাবেন। এছাড়া পান্থপথ, মিরপুর, বসুন্ধরা সিটিসহ ঢাকার অন্যান্য মার্কেটেও পাবেন, যদিও দামটা একটু বেশি পড়বে আর এত কালেকশনও পাবেন না।
আপনার ঘরের আবহকে আরও মোহনীয় করে তুলতে আলোকিত ঘরের এই আইডিয়া কিন্তু আপনার সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বেরই ছবি প্রকাশ করবে। তাই পছন্দমতো লাইট কিনে ঘরের সাজসজ্জার কাজটি পরিপূর্ণ করার এখনই যে পারফেক্ট সময়!