By Tasnim Jarin
“স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা”।
খ্যাতিমান কবি শামসুর রাহমান এর ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার মতো স্বাধীনতার মানে একেকজনের কাছে একেক রকম। স্বাধীনতার আছে বহু রূপ, আছে অনুভূতি, আছে ভাষা। স্বাধীনতার প্রকাশ কারো জন্য সরল, কারো জন্য হয়তো নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিশাল এক অর্জন। আর এই প্রাপ্তি বা অর্জনের পুরস্কারই হলো আমাদের দেশ, আমাদের ভাষা, আমাদের পরিচয়। স্বাধীনতার লাল-সবুজ রঙ যেন আমাদের মনে করিয়ে সীমাহীন কষ্ট, আতঙ্ক এবং ত্যাগের কথা। কেননা আজ আমাদের পতাকার এই লাল-সবুজ বিজয়ই যে সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের ফলে। স্বাধীন হয়েছে জাতি, খুঁজে পেয়েছে তার ঠিকানা।
আর তাই স্বাধীনতার এই অর্জন উদযাপনে আয়োজনও হওয়া উচিৎ লাল-সবুজের আদলে। স্বাধীনতা অর্জনের বিশেষ এই দিনটি উদযাপনে চারিদিক যেন উৎসবমুখর হয়ে উঠে। লাল-সবুজ শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে উৎসবে মেতে উঠে সবাই। তারুণ্য আর সাহসিকতার অনন্য এক পরিচয় বহন করা এই দুই রঙ আমাদের মনে অনুপ্রেরণা জোগায় যুদ্ধ জয়ে বেঁচে থাকার। আর পৃথিবীকে মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা।
স্বাধীনতার দিনটি উদযাপনে আমরা ঘরে ছোট করে একটা আয়োজন করতে পারি। যেখানে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা লাল-সবুজ রঙের পোশাক পরে আসবে। আর পুরো ঘর জুড়ে থাকবে ভিন্ন একটা সাজ। এক্ষেত্রে ঘরের লিভিং এরিয়ার যেকোনো একটি দেয়ালে টাঙিয়ে দিতে পারেন বাংলাদেশের একটি মানচিত্র। আর তার পাশে একটি দেয়াল বোর্ড। যেখানে প্রত্যেকে তাদের ব্যক্তি জীবনের স্বাধীনতার কথগুলো ছোট করে লিখতে পারবেন। কারো কাছে স্বাধীনতার অর্থ হয়তো হবে বিশেষ কোন অনুভূতি, কারো জন্য স্বাধীনতা হয়তো কিছু শব্দ, আবার কারো কাছে স্বাধীনতা মানে হয়তো বিশেষ কোনো প্রাপ্তি। আর তাই প্রত্যেকেই তাদের এই ছোট ছোট কথাগুলো লিখে রাখতে পারেন ‘স্বাধীনতার অ্যালবামে’।
এছাড়া ঘরের অন্য কোন নির্দিষ্ট দেয়াল স্বাধীনতার রঙে ডিজাইন করে নেয়া যেতে পারে। যারা রঙ-তুলি পছন্দ করেন তাদের জন্য এই দেয়ালটি হবে একটি স্বাধীন দেয়াল। মনের সকল কথা তারা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন এই দেয়ালে রঙের ছোঁয়ায়। যেখানে লাল-সবুজ রঙের প্রাধান্যই থাকবে বেশি। তবে আপনি চাইলে অন্য যেকোনো রঙের শেডও ব্যবহার করতে পারবেন এ দেয়ালে। শুধু তাই-ই নয়, দেয়ালের জন্য লাল-সবুজের দারুণ একটা ইলিউশন করিয়ে নিতে পারেন। এই দেয়ালের বিভিন্ন কর্নারে থাকবে সবুজের সমারোহ, থাকবে ফোকাস লাইট এবং বইয়ের তাক। যেখানে থাকবে পছন্দের সব লেখকের লেখা দারুণ সব গল্প-কবিতার বই। এতে করে পুরো ঘর যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
স্বাধীনতা উদযাপনের বিশেষ এই দিনটি বাসার বাচ্চাদের জন্যও আনন্দের একটি দিন করে তুলতে তাদের জন্য ছবি আঁকার আসর, গান, গল্প বা কবিতা আবৃতির আয়োজনও করা যেতে পারে। যেখানে পরিবারের ছোট শিশুরা তাদের মনের মতো করে বলবে লাল-সবুজের কথা, মাতৃভূমির কথা। তাদের আঁকা ছবির জন্য ভিন্ন একটা কর্নারও তৈরি করা যেতে পারে। স্বাধীনতা দিবসে করা বিশেষ এই আয়োজন বাসার ছোট বাচ্চাদের সাথে বড়দের জন্যও বেশ আনন্দের হবে।
স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ হোক সর্বত্র। ঘরের আঙ্গিনা ছেড়ে বাইরে, কিংবা কানভ্যাসের পৃষ্ঠা থেকে দেয়াল জুড়ে সর্বত্র থাকুক স্বাধীনতার জয়ধ্বনি। আর এভাবেই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে আমাদের প্রতিটি ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাদের জড়িয়ে রাখবে দেশের সাথে, দেশের সাথে যুক্ত থাকা সকল অনুভূতির সাথে।