By Tasnim Jarin
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব সবাইকে সাথে নিয়ে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়াই যে ঈদের তাৎপর্য। তবে বিগত বছরের মতো এ বছরেও উৎসব উদযাপনে আমাদের থাকতে হচ্ছে সতর্ক। আর এই সতর্কতার পেছনের মূল কারণই হল করোনা ভাইরাস এবং এর মহামারি রূপ। তবে তাই বলে যে ঈদের আনন্দ একেবারেই মলিন হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। মসজিদে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ জামাতে আদায় করতে না পারলেও, ঘরে থেকে একান্ত পরিবারের সাথে ঈদের বিশেষ দিনটিকে কিন্তু আনন্দময় করাই যায়।
লকডাউন এবং কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যকার কঠিন এই সময়ে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যেমন উচিৎ নয়, তেমনি বের হলেও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তো থাকছেই। তাই পরিবারের সুরক্ষায় ঘর থেকে বের হওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনের দিকটার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। নিজের কিংবা পরিবারের সবার জন্য ঈদের বিশেষ কেনাকাটা করা, এক শপিংমল থেকে অন্য শপিংমলে দৌড়ে বেড়ানো, এখন আর নিউ নরমালের মধ্যে পড়ছে না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এবার না হয় অনলাইনেই কেনাকাটা করে নিন। আজকাল প্রায় সব ব্র্যান্ডেরই অনলাইন স্টোর আছে। তাই দোকানে গিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি না নিয়ে পছন্দের ডিজাইনটি বেছে নিন অনলাইন থেকে খুব সহজেই।
ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ঘরের নির্দিষ্ট একটি রুম সাজিয়ে নিন আগেভাগেই। প্রয়োজনীয় সব জিনিস যেমন- জায়নামাজ, তসবিহ, সুগন্ধি, শতরঞ্জি ইত্যাদির প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন নামাজের রুমের জন্য। ঈদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিনটা শুরু হোক পরিবারের সাথে।
ঈদে পরিবারের সাথে সময় কাটাবো এমনটাই তো আমরা চাই। তবে খুব বেশি মানুষের বাসায় ঘোরাঘুরি কিংবা ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছেটাকে এ বছরও রাখতে হবে তালাবন্ধ করে। তবে বিকল্প উপায়ে ভার্চুয়াল গেট-টুগেদারের আয়োজন করতে পারেন। আর তাই আত্মীয়দের সাথে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার পালা। ঈদের নামাজ পড়া শেষে পরিবারের সাথে এবার খাবার খাওয়ার পালা। ঈদ উৎসবে হরেক রকম মজাদার খাবারের আয়োজন যেমন- জর্দা, মিষ্টি, সেমাই, গাজরের হালুয়া, কুনাফা, পুডিং ইত্যাদি আর সাথে কাবাব, পাস্তা, চটপটি-ফুচকা দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে নিন।
যদিও ঘর থেকে বের না হওয়ার প্ল্যানই আমরা করবো। তবে খুব নিকট আত্মীয়দের বাসায় যদি যেতেই হয়, তবে যেন মাস্ক এবং স্যানিটাইজার এই দুইটি জিনিস আমরা কোনভাবেই সাথে রাখতে না ভুলে যাই। শুধু তাই-ই নয় গাড়ি করে কোথাও যাওয়া-আসার আগে অবশ্যই ডিসইনফেক্ট্যান্ট স্প্রে দিয়ে গাড়ির ভেতর, হাতল ইত্যাদি স্যানিটাইজ করে নেই।
সাবধানতার কারণেই এ বছরও নামাজ শেষে কোলাকুলি করা থেকে আমরা বিরত থাকবো। বিশেষ করে বাড়ির বয়স্ক যারা আছেন তারা যেন বাড়ির বাইরে বা কোনও রকম ভিড়ের মধ্যে যেন না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। ঈদের এই সময় বাসায় অতিথি আসলে তখনও এই বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো পরিস্থিতির আগে সুস্থ থাকাটাই যে এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। আর তাই তো এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
আর এই দূরত্ব কাটিয়ে তুলতে ভার্চুয়াল দুনিয়াই এখন একমাত্র আশার আলো। বিগত বছরের মতো ভিডিও কলে কোলাকুলি করে ডিজিটালি সালামিটাও নিয়ে নিন যখন-তখন। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধার্থে লেনদেন যে এখন সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। তবে বাড়ির ছোটদের জন্য সালামিটা কিন্তু দিতে হবে নগদেই।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মধ্যেই এর মহত্ত্ব। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে ঈদ পালনের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ হয়ে যাবে দ্বিগুণ। বিশেষ এই দিনটিকে আরো রঙিন করে তুলতে তাই অসহায় মানুষের সাথে ঈদ আনন্দ শেয়ার করতে বিভিন্ন গ্রুপ কিংবা প্রতিষ্ঠানে অর্থ সাহায্য দিয়ে আপনিও এই আনন্দ ভাগ করে নিতে পারবেন। মহামারির এই সময়টা কাটিয়ে উঠতে আমাদের ছোটখাটো যেকোনো উদ্যোগই হয়ে যাবে সুবিধাবঞ্ছিতদের জন্য বিশাল কিছু।
ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। কঠিন এই সময় পার করে সবাই মিলে একসাথে ঈদ উদযাপনের দিন ফিরে আসুক আবারো। সতর্কতার সাথে কাটুক এবারের ঈদ আয়োজন। ঈদ মোবারক।