By Tasnim Jarin
একটি নতুন বছর, নতুন কিছু আশা নিয়ে শুরু হয় যার পথচলা। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে তাই আয়োজনের যেন কোনও কমতি থাকে না। উৎসবের শুরুটাই যেন হয় লাল-সাদার আদলে। তবে নির্দিষ্ট কোন রঙে এই আয়োজন সীমাবদ্ধ থাকে না। কেননা, উৎসবের আনন্দ যে নির্দিষ্ট কিছু রঙের ছকে বাঁধা থাকে না। আর তাই তো বাংলা নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ, বৈশাখে রঙিন হয়ে ওঠে আমাদের চারপাশ।
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকুক আর না থাকুক বৈশাখকে বরণ করে নেয়ার আয়োজনটা যেন বরাবরের মতোই বিশেষ হয়। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে বৈশাখী সাজে নিজেকে প্রস্তুত করা, অতিথি আপ্যায়নে আয়োজন; সবই যেন করা চাই প্ল্যান অনুযায়ী। আর তাই বৈশাখ আসার আগে থেকেই চলে প্ল্যানিং এবং শপিং এর সকল প্রস্তুতি।
বিগত বছরগুলোর মতো বৈশাখের প্রস্তুতি এবারও স্বাভাবিকভাবেই একই ধরনের হবে না। তবে কেমন হতে পারে এবারের বৈশাখের আয়োজন? চলুন ভেবে নেই কিছুটা সময় নিয়ে।
বাংলা নতুন বছরের শুরুতে পুরো ঘরের নকশা পরিবর্তন করা সম্ভব না হলেও, নির্দিষ্ট কোন দেয়ালে কিন্তু পরিবর্তনের ছাপ দেয়াই যায়, তাই না? যেমন ধরুন, লিভিং রুম বা ড্রইং রুমের একটি দেয়ালে কিন্তু কালারফুল ইলিউশন করে নিতে পারেন। বাসায় অতিথি আসলে এই রুমগুলোতেই যেহেতু আড্ডা চলে অনেকটা সময় ধরে, তাই সাজটাও হওয়া চাই বৈশাখী ধাঁচে। প্রকৃতি যখন রঙিন সব ফুলের সাজে হাজির হচ্ছে তখন সব জরাজীর্ণ বিষণ্ণতা মুছে ফেলে ঘরের ভেতরটাও যে হওয়া চাই রঙিন। বার্জারের ইলিউশন ব্যাংক থেকে তাই খুব সহজেই পছন্দের ডিজাইন বেছে নিয়ে নতুন বছরের শুরুতে ঘরের দেয়ালে এঁকে দিন নতুন ডিজাইন।
বৈশাখী সাজে ঘর সাজাতে শতরঞ্জি হতে পারে দারুণ এক সমাধান। একেবারে দেশীয় সাজে ঘরের ভেতরটা সাজাতে বিভিন্ন রঙের সুতোয় বোনা সুন্দর ডিজাইনের শতরঞ্জি পাওয়া যাবে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারে। পরিবারের বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সাজিয়ে নিন শতরঞ্জি কর্নার। শতরঞ্জির একপাশে ফ্লোরে রেখে দিতে পারেন ফুল-লতাপাতা ডিজাইনের কয়েকটি কুশন। এছাড়া ঘর সাজাতে মাটির তৈরি শোপিস যেমন- হারিকেন, মাছ, মাটির চুলা-পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন ঘরের কর্নার সাজাতে। মাটির ফুলদানিতে রাখতে পারেন ইনডোর প্ল্যান্টস এবং বিভিন্ন ডিজাইনের প্রদীপ।
আকার-আকৃতি, রং এবং নকশার ওপর নির্ভর করে শতরঞ্জির দাম। দুইশত টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার বা এর বেশি মূল্যেরও শতরঞ্জি পাওয়া যায়। যা নিউমার্কেট, গাউছিয়া, রাজধানী সুপার মার্কেট, গুলিস্তান, গুলশান ১ ডিসিসি মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন মার্কেট থেকে কিনতে পারবেন।
ঘরের ভেতরের সৌন্দর্য দেয়ালের রঙের সাথে সাথে পর্দার ডিজাইন এবং রঙের উপরও নির্ভর করে। বাংলা নতুন বছরের শুরুতে তাই চাইলে পাল্টে নিতে পারেন পুরনো পর্দার ডিজাইন। এক্ষেত্রে আড়ং, নিপুণ, দেশি দশে পাবেন দেশীয় মোটিফে করা হালকা-গাঢ় রঙের থিমের বিভিন্ন ধরনের পর্দা। ব্লক, বাটিক ডিজাইনের পর্দাও কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। তবে আর দেরি কেন? পর্দার সাথে বিছানার চাদর মিলিয়ে বৈশাখের কেনাকাটা করে নিন অনলাইনে কিংবা অফলাইনে।
বৈশাখের শুরুটা যেহেতু রোজার দিনে হচ্ছে, তাই ইফতারে অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহার করতে পারেন মাটির সব পাত্র। অন্যদিকে ডাইনিং টেবিল সাজাতে রাখতে পারেন তাজা ফুল, বেতের তৈরি সার্ভিং ডিশ, কালারফুল টেবিল ম্যাট।
এবারের বৈশাখে একটু ভিন্ন ধাঁচের মেন্যু করতে তাতে রাখতে পারেন লেবু-পুদিনার শরবত, আনারস, তরমুজের বা কাঁচা আমের শরবত। এতে করে গরম থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শান্তি মিলবে। এছাড়া নানারকম মিষ্টি খাবার যেমন- গুড়ের পায়েস, দই, ছানার মিষ্টি, মণ্ডা, রসগোল্লা ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন। বাজার থেকে কিনে আনতে পারেন নাড়ু, খই, মুড়ি, বাতাসা, নিমকিসহ দেশীয় মুখরোচক সব খাবার। আর এসবের সাথে অনেক রকমের ভর্তা আর মাছ ভাজা তো তালিকায় থাকছেই।
লাল-সাদা কিংবা সবুজ-নীল, বৈশাখের সাজে ফুল, শাড়ি এবং পাঞ্জাবী উৎসবের আনন্দটাকে দ্বিগুণ করে তোলে। আর এ আনন্দ উদযাপনে নতুন বছরটা সবার জন্য বয়ে আনুক সুস্থতা এবং মঙ্গলের বার্তা। শুভ নববর্ষ ১৪২৮!