By Kazi Sadia Islam Roza
জন্মদিন ব্যাপারটা বরাবরই খুবই ব্যক্তিগত ‘উৎসব’মূলক। আর যদি হয় সন্তানের জন্মদিন, তাহলে মা-বাবার উচ্ছ্বাস, আদর আর পরিকল্পনা-টা হয়ে ওঠে বিশেষ।
নিজের জন্মদিনে যা হয়ত কখনো আলাদা করে ভেবে দেখেননি, সেটাই ভাবা হয়ে ওঠে সন্তানের জন্য। খানিকটা বেশি আয়োজন, প্রিয় সব রঙ মাখা যত্নে দিনটি যেন সম্পূর্ন হয় সে জন্যেই দরকার একটু ‘প্লানিং’।
বাচ্চার জন্মদিনের প্লানিং-এ করা যাবে না কোন তাড়াহুড়া। সময় হাতে নিয়ে প্লানিং করুন। এই দিনটি যেন বাচ্চার জন্য একটা পজেটিভ এনার্জি নিয়ে আসে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
আপনি যদি সঠিক বাজেট প্লানিং-টা সেরে নিতে পারেন তাহলে পার্টি’র প্লান এগিয়ে যাবে অনেকটা। আপনি ঠিক কত জন-কে দাওয়াত করতে চান, কি ধরনের আয়োজনে সাজাতে চান ভ্যেনু, ফুড মেনু আর কেক সেটার বাজেট প্লানিং সব থেকে জরুরী। যেহেতু বার্থ-ডে পার্টি, তাই ‘কেক’-এর গুরুত্ব সব থেকে বেশি। ‘কেক’ এর সাথে কোন কম্প্রমাইজ না করেইই বাকী সব ঠিক করতে পারেন সাধ্যের মধ্যেই । বাজেট ঠিক করে সেটার মধ্যেই সব কিছু করার চেষ্টা করতে হবে, তাহলেই প্লানিং সফল।
জন্মদিনের পার্টি’র ছোট ছোট দায়িত্ব দিন বাচ্চার উপর, তার পছন্দ- অপছন্দ-কে প্রাধান্য দিন তবে তাকে পুরো ব্যাপারটা ঠিক করে বুঝিয়েও বলুন। বাচ্চারা এমন কাজে নিজেদের-কে প্রমাণ করতে আনন্দ পায়, তাই তাকে উৎসাহ দিন, কাজে সাহায্য করতে আসতে চাইলে সেটি করতে দিন।
শিশুদের বার্থডে পার্টি’র থিম পরিকল্পনাটা বেশ সেনসেটিভ ইস্যু। যেহেতু আরো অনেক বাচ্চা আমন্ত্রিত হবে তাই সব দিক মাথায় রেখেই একটি শিশুসুলভ থিম বাছাই করা উচিৎ। রুপকথার নানা চরিত্র, ডিজনি’র এনিমেশনের থিমে বাচ্চাদের বার্থডে প্লানিং হয়ে থাকে সাধারনত তবে চাইলে নিজেদের মত করে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। তবে থিমের সাথে মিল রেখে ডেকোরেশন খুবই জরুরী সাথে পোশাক এবং অনুষঙ্গ। যতটা সিম্পেল এবং আনন্দদায়ক করা যায়, ততই ভালো।
পার্টি মানেই বিরিয়ানি- পোলাও- মাংস- রোস্ট এই ঘরনা থেকে বের হয়ে আসুন। ব্যাপারটা জন্মদিনের থেকে বিয়ে বাড়ি বেশি মনে হয়। বাচ্চারা খেতে পছন্দ করে, সহজ পাচ্য এবং একই সাথে রিফ্রেশিং খাবার রাখুন তালিকায়। চকলেট ডেজার্ড, মজাদার রোল, স্যুপ রাখতে পারেন মেন্যুতে। আপনার বাজেট ফ্রেন্ডলি কি না সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
যদিও এখন স্মার্টফোনের যুগ, ফোনেই আমরা সবাইকে দাওয়াত দেই তবে শিশুর জন্মদিনের ক্ষেত্রে খানিকটা ব্যতিক্রম চাইলেই করা যায়। আপনি এবং আপনার শিশু দুইজন মিলে ঘরে বসে রঙ্গিন কাগজ দিয়ে বানাতে পারেন মজার সব ‘দাওয়াত’-এর কার্ড। ইন্টারনেটে প্রচুর সহজ টিউটোরিয়াল আছে, সেগুলো দেখে নিজে নিজে কার্ড বানাতে আপনার শিশুও আনন্দ পাবে। কার্ড বানাতে বানাতে আপনি তার কাছে জেনে নিতে পারেন তার প্রিয় বন্ধু কারা, কাদের সে দাওয়াত দিতে চায় তার জন্মদিনে।
পার্টিতে একটা সারপ্রাইজ এলিমেন্ট রাখুন। সেটা গেইম শো হতে পারে, ম্যাজিসিয়ানের ম্যাজিক বা ট্রেজার হান্ট। সবাই যেন একে অন্যের সাথে ইন্টার্যাক্ট করে সেটা খেয়াল রাখুন। যতটা সম্ভব উচ্চস্বরের মিউজিক , ডিভাইজ এড়িয়ে পার্টি আয়োজন করুন। পরিবেশটা যেন হালকা আমেজে উৎসব মুখর হয় এবং সব শিশুরা যেন সমানভাবে আনন্দ পায় সেটাও খেয়াল রাখা জরুরী।
জন্মদিনের গিফট নিয়ে শিশুদের আগ্রহের শেষ নেই, ‘গিফট’ ছোট বা বড় হোক বাচ্চারা সেটা খুবই আগ্রহ নিয়ে গ্রহন করে। আপনার শিশুর জন্মদিনের উৎসবে অন্য যে বাচ্চারা অতিথি হয়ে আসবে তাদের জন্য সামান্য উপহার প্লান করলে জন্মদিনের পার্টির আকর্ষন বেড়ে যাবে অনেক, অতিথিদের জন্য করা এই ছোট সৌজন্যটি, বাচ্চাদের আনন্দ দেবে। উপহার দেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার শিশুকে সম্পৃক্ত করুন, সে নিজে হাতে গিফট দিলে তার বন্ধুদের, নিজেও অনেক খুশি হবে।
আপনার শিশুর আনন্দটাই এই পুরো প্লানিং-এর মূল উদ্দেশ্য। সে প্রত্যেকটি পদক্ষেপে যেন আপনার আরো একটু কাছে আসে, আপনি যে তাকে কতটা বোঝেন আর ভালোবাসেন সেটি বুঝতে পারে। তার প্রতিটি জন্মদিন যেন জীবনের স্মৃতিতে সুন্দর একটি অধ্যায় হয়ে থাকে সেটাই আপনার একান্ত চেষ্টা।