By Tasnim Jarin
এই তো আর কয়েকমাস বাকি, ছোটবেলার বান্ধবীর বিয়ের তারিখ যে একদম ঠিকঠাক। রংধনুর সাত রঙের মতো আমাদের ৭ বান্ধবীর পছন্দও যে ৭টি ভিন্ন রঙ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আমাদের কতশতই না প্ল্যান ছিলো, বিয়েতে এভাবে সাজবো, শাড়ি হতে হবে এই রঙের, হলুদের অনুষ্ঠানে ঐ গানে না নাচলেই নয়; এসব ভাবতে ভাবতেই ৭ বান্ধবীর একজনের বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেলো। তো বাকি ৬ জন ঠিক করলো, দারুণ একটা ব্রাইডাল শাওয়ারের প্ল্যান করে ব্রাইডকে সারপ্রাইস দিয়ে দিবে!
তো এই ব্রাইডাল শাওয়ার-এর থিম কী রাখা যায়? খুব একটা বেশি ভাবতে হয়নি, ব্রাইডের পছন্দের রঙ যে গোলাপি, তার পছন্দের রঙ-ই তবে প্রোগ্রামের থিম হোক! আর সময়টা না সকাল, না দুপুর; সকাল আর দুপুরের খাবারের মাঝামাঝি, যাকে বলে ‘ব্রাঞ্চ আওয়ার’। তো প্ল্যান অনুযায়ী, যে যার কাজে নেমে পড়া। ও হ্যাঁ, হাতে সময়ও খুব বেশি ছিলো না বিধায় কাজগুলোকে আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলাম। আর হ্যাঁ, ব্রাইডাল শাওয়ারের প্ল্যান কোন এক বান্ধবীর বাসায় করাই ভালো। ব্রাইড বাসায় ঢুকেই যেন একদম সারপ্রাইজড হয়ে যায়!
প্রথমেই আসি বাজেটের কথায়, বাজেট আনুমানিক ১৫-২০ হাজার টাকা ধরে আমরা কাজে নেমে পরলাম। ডেকোরেশন, গিফট কেনা, খাবার আয়োজন, প্রপস; এই চারটি কাজই মূলত আমাদেরকে করতে হবে। এক্ষেত্রে যে যার কাজ বুঝে নিয়ে আমরা মাঠে নেমে পরলাম। শুরু করলাম ডেকোরেশনের কাজ দিয়ে।
আমাদের এক বান্ধবী বলছিলো পরিচিত এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাহায্য নিতে। যদিও পরবর্তীতে আমরা নিজেরাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজটা করে ফেললাম। কোন রেস্টুরেন্টে এই ব্রাইডাল শাওয়ারের আয়োজন করতে গেলে, আমাদের বাজেটটা হয়তো ৩০ হাজারের ঘরে চলে যেতো। তাই নিজেরাই ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করে ফেললাম দারুণ কিছু আইডিয়া। মূলত পিন্টারেস্ট নামক ওয়েবসাইট থেকেই হোম ডেকোর বিষয়ক ক্রাফটস বানানোর বেশ কিছু উদাহরণ দেখে বানানো শুরু করে দিলাম।
আর্ট পেপার, গ্লিটার, কালার পেন্সিল এগুলো নিয়ে ছোটখাটো ব্যানার বানিয়ে নিলাম। সাথে হালকা রঙের ২০টি বেলুনের অর্ডারও করা হলো। চার্ট পেপার কিনে নিয়ে তা দিয়ে ফুল এবং প্রপস বানিয়ে নিলাম, যেখানে আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেলো। অন্যদিকে মরিচ বাতি এবং ফুলেরও অর্ডার দিয়ে দিলাম।
গিফটের জন্য ঠিক করা হলো, ব্রাইডকে হালকা গোলাপি রঙের একটা গাউন দিবো। সাথে জুয়েলারি, মিউজিক্যাল ফটো অ্যালবাম, মাথার মুকুট আর একটা ব্রাইড টু বি স্যাশ। সব মিলিয়ে ৮ হাজার টাকার মধ্যেই গিফটের জন্য সব কিছু কেনা হয়ে গেলো।
এবার আসি খাবারের মেন্যুতে কী থাকতে পারে সেই আলোচনায়। আমাদের এক বান্ধবী খুব ভালো কেকে বেক করতে পারতো বলে কাপ কেক বানানোর পুরো দায়িত্বটাই তার উপর চলে গেল। আর মেইন কেকটা অর্ডার করা হলো ব্রাইডের পছন্দের ফ্লেভারের।
তবে কেক বেক করতে না পারলেও সমস্যা নেই। পছন্দমতো কাপ কেক এবং মাফিন কেক শপগুলোতে অর্ডার দিয়ে দিলেই হয়ে যাবে।
আমাদের নেক্সট সারপ্রাইস ছিলো ব্রাইডকে তার পছন্দের রেস্টুরেন্টে ট্রিট দেওয়া! আর এজন্য আগে থেকে রেস্টুরেন্টে রিজার্ভেশনের কথা বলে রাখায় আয়োজনে কোন ঝামেলাই হয়নি। তো এই পুরো ব্রাইডাল শাওয়ার আয়োজনে আমাদের ৬ বন্ধুর উত্তেজনার যেমন কোনো কমতি ছিলও না, তেমনি ব্রাইডও সুপার সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলো!