by Tamanna Islam
এইতো সেদিন ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছিলো। এরপরই করোনার আগমনে পৃথিবিতে নেমে এলো স্তব্ধতা। কিন্তু বাড়ির বড়রা বিয়ের তারিখ আর পেছাতে নারাজ। তাই হুট করেই ভাবীর বাড়িতে ঘরোয়া আয়োজনে দুই পরিবারের সবার উপস্থিতিতে সম্পন্ন হলো ভাইয়া আর ভাবীর শুভ বিবাহ। বিয়ের আয়োজন ছিলো বেশ। সুরক্ষা মেনে ঘরোয়া আয়োজনে কমতি ছিলো না কোন কিছুরই। বরং সকলের আন্তরিকতা আর ভালোবাসায় বিয়ে বাড়ি হয়েছিলো পরিপূর্ণ। এবার প্রিয় ভাবীকে আমাদের বাড়িতে বরণ করে নেওয়ার পালা। কি কি আয়োজন করা হয়েছিলো সেদিন, জানতে সঙ্গেই থাকুন!
গাড়ি থেকে নেমেই নতুন বউয়ের যেনো স্পেশাল ফিল হয় তার জন্য সাজানোটা আমরা শুরু করেছিলাম বাড়ির বাইরে থেকেই।
আমার সব কাজিনরা আর আমার ছোট ভাই মিলেই দায়িত্ব নিয়েছিলাম সাজানোর। আমরা বিয়ে বাড়ি থেকে একটু আগেই চলে এসেছিলাম যেনো সব ঠিকঠাক মতো করতে পারি। বাড়ির বাইরে থেকে ঢোকার দরজা পর্যন্ত একটা রেড কার্পেট বিছিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
এরপর গোলাপ আর গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে সাজিয়ে রেখেছিলাম ডালাতে। আর কাজিনরা সবাই মিলে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম দুইপাশে। নতুন বউ গাড়ি থেকে নামতেই দুপাশ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো ফুলের বৃষ্টি। আর সারা বাড়ি জুড়ে ছিলো মরিচ বাতির আলো।
এরপর আসা যাক আলপনায়। আলপনা ছাড়া বিয়ে বাড়ি ভাবা যায়! আজকাল বিয়েতে আলপনা সেভাবে না দেখা গেলেও আমাদের বাড়িতে আলপনার চল বহুদিনের।
টুকটাক আঁকাআঁকি পারি বলে রঙ তুলি নিয়ে নিজেই বসে গেলাম আলপনার কাজে। আর আলপনা শুরু হয়েছিলো সিড়ি থেকেই।
আর ঘরের ভেতরে টাইলস থাকায় ফুল দিয়ে ফ্লোরে আলপনার মত ডিজাইন করেছিলাম।
ঘরের প্রধান দরজায় মা, খালা, ফুপু আর চাচীরা দাড়িয়েছিলেন নতুন বউ বরণে। আর বরণ ডালা আমরা আগেই সাজিয়ে রেখেছিলাম। বরণ ডালা জুড়ে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো ছিলো আর তার ওপর মিষ্টি, সরবত আর ক্যান্ডেল। আমাদের ঘরোয়া হলুদ আয়োজনে আনা কিছু ডালা এক্সট্রা ছিলো আর তাই কাজে লাগানো হলো। যথারীতি বড় চাচী মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নিয়েছিলেন আমাদের পরিবারের নতুন সদস্যকে।
এরপর আংটি খোঁজার আয়োজন। যার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আমার কাজিন টুশি একটা বড় বোলে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলো।
তামার এই বোলটা আমার দাদি মা কে উপহার দিয়েছিলেন। প্রথমেই বোলে পানি নিয়ে তাতে লাল রঙের ফুড কালার মেশানো হয়। এরপর বর-বউয়ের আংটি সহ কতগুলো আংটি পানিতে ছেড়ে দিয়ে ওপরে ফুলের পাপড়ি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিলো। এরপর আংটি খোঁজার পালা। প্রথমে ভাবীই আংটি খুঁজে পেয়েছিলো।
নতুন বউয়ের ঘর সাজাতে আমাদের একটু বেগ পেতে হয়েছে। কারোরই ঘর সাজানোর তেমন অভিজ্ঞতা ছিলো না। শাহাবাগ থেকেই আগেই ভাবীর পছন্দের অর্কিড কিনে আনা হয়েছিলো।
ছোট খালা এসে শেষ রক্ষা হলো। সাদা বেড শীট দিয়ে কি সুন্দর করে ছোট খালা হাসের আকৃতির মত বানিয়ে ফেললো। এরপর সাদা শুভ্র বেড শীটের ওপর নীলচে বেগুনি রঙের অর্কিড ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘরে কিছু সুগন্ধি মোমবাতি আর জানালার পর্দায় ফেইরি লাইট ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিলো। কি যে সুন্দর দেখাচ্ছিল ঘরটা!
বিয়ে বাড়ি থেকে আসার কারণে খাবারের প্রতি কারোও চাহিদা ছিলো না। কিন্তু অনেক দিন পর সব কাজিন একসাথে হওয়ায় সিদ্ধান্ত হলো রাত জাগা হবে।
আর তাই হালকা কিছু স্ন্যাক্সস যেমন- নাগেটস, চিকেন পপ, কাপ কেক আর হরেক রকমের মিষ্টি এর আয়োজন করা হয়েছিলো। আর সভাবতই গরমের কারণে কোল্ড ড্রিংক্স ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাত জাগা আর হয়নি। যে যেখানে ছিলো সেখানে ঘুমিয়েই রাত পার।
এভাবেই আনন্দ আর আন্তরিকতায় কেটে গেছে বিয়ের এই কয়টা দিন। বর্তমানে এই পরিস্থিতি না হলে বিয়ের এই আনন্দটুকু অনেকটাই পাওয়া হতো না। আর বাড়ির একজন স্পেশাল মানুষের আগমনের আয়োজনটাও এতো খুশির হতো না।