প্রিয়জনের জন্য ভালোবাসা দিবসের স্পেশাল প্ল্যান - Berger Home Diaries
parallax background

প্রিয়জনের জন্য ভালোবাসা দিবসের স্পেশাল প্ল্যান

By Tasnim Jarin

আচ্ছা বলুন তো, ভালোবাসার মানুষের জন্য কোনও নির্দিষ্ট একটি দিন কি ঠিক করে রাখা সম্ভব? ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটানো প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তই তো বিশেষ, হোক সেটা খুবই সাধারণ একটি সকাল, এক কাপ চা হাতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখা। কিংবা সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরে ক্লান্ত হলেও দুজন মিলে রাতের খাবার তৈরি করতে করতে সারাদিনের গল্পটা শেয়ার করা। এগুলো হয়তো খুবই সাধারণ কিছু মুহূর্ত, কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশ যে হচ্ছে নীরবে, এটা নিশ্চিত। জীবনের প্রতিদিনের মুহূর্তগুলো জ্যামিতিক ধাঁচের হলেও, সাধারণ মুহূর্তগুলোকে উপলব্ধি করার এই সুযোগই আসলে বিশেষ। আর এর উপস্থিতি যতক্ষণ আমাদের জীবনে থাকছে, নির্দ্বিধায় বলা যায় সেসব মুহূর্ত অবশ্যই আশীর্বাদস্বরূপ।

ভালোবাসার এই দিনটি যে শুধুই সীমাবদ্ধ থাকবে দুইজন মানুষের মধ্যে, তা কিন্তু নয়। ভালোবাসার বিশেষ এই দিনটি উদযাপন করা হবে যাদের আমরা ভালোবাসি অর্থাৎ, আমাদের পরিবার-বন্ধু সবার সাথে। 

আর তাই ভালোবাসা দিবস হিসেবে একটি দিন যেহেতু আছেই, প্রিয়জনের জন্য স্পেশাল কিছু প্ল্যান তো করাই যায়। কি বলেন? চলুন একটু ভেবে দেখি বিশেষ এই দিনে কী কী স্পেশাল করা যায়।      

প্রিয় মানুষটিকে উপহার কী দিবেন, ভেবেছেন কিছু?

উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই বেশ দ্বিধায় পড়ে যাই, ‘কী কিনবো? যদি পছন্দ না করে?’ এসব ভেবে। আসলে উপহার তো উপহারই, তবে যে মানুষটিকে আপনি ভালোবাসেন তার ভালোলাগা-মন্দলাগার বিষয়টি নিয়েও আপনার ধারণা থাকা চাই। তাই শান্ত মনে প্রথমে একটু ভেবে নিন। হতে পারে পছন্দের ব্র্যান্ডের কোনও পারফিউম, পছন্দের লেখকের কোনও বই যেটা কিনবে বলেও অনেকদিন ধরে কেনা হচ্ছিলো না অথবা কোনও গেজেট আইটেম বা নিজ হাতে তৈরি করা কোনও খাবার কিংবা একটা ভেকেশান প্ল্যান। প্রতিদিনের ব্যস্ততার ভিড়ে আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই দুই-একদিনের একটা ভেকেশান প্ল্যান কিন্তু সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করে তুলতে পারে। আর তাই ভালোবাসার এ দিনটিকে উদ্দেশ্য করে একটা স্পেশাল ভেকেশান প্ল্যান করে ফেলতে পারেন। সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়, এর চেয়ে বরং আগেভাগেই প্ল্যানটা শেয়ার করুন। ব্যস্ত জীবনে আমাদের সময়ের বড্ড অভাব, তাই উপহার হিসেবে কিছুটা সময়ই না হয় দিলেন একজন আরেকজনকে।       

ছবি দিয়ে বানাই স্ক্র্যাপ বুক

ছবি দিয়ে মেমোরি ওয়াল বানানোর মতো ছবি দিয়ে স্ক্র্যাপ বুক বানিয়ে নিতে পারেন খুব সহজেই। আর এই স্ক্র্যাপ বুকটা হবে ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষের জন্য একটা সারপ্রাইজ। আমরা অনেকেই ঘরে বসে ক্রিয়েটিভ ক্র্যাফটস বানাতে পছন্দ করি। নিজ হাতে বানানো সেসব ক্র্যাফটস নিঃসন্দেহে কোনও সুপারমল থেকে কিনে আনা গিফটসের থেকে স্পেশালই হবে। আর এরকম ইউনিক কিছু করতে চাইলে প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর পুরনো স্মৃতি নিয়ে বানিয়ে নিন স্ক্র্যাপ বুক।

মন ভালো আর মন খারাপের সব গল্পই থাকবে সেখানে। আর সাথে সময় এবং সালটা যদি মনে থাকে তবে ছবির পাশে মার্কার দিয়ে লিখে ফেলুন। আর সুন্দর করে ডিজাইন করার জন্য কাগজ কেটে ছোট ছোট হার্টস, স্টার, স্মাইলি ফেস বানিয়ে আঠা দিয়ে বই এর বিভিন্ন পাতায় লাগিয়ে দিন আর ওয়াসি টেপ এবং রিবন দিয়ে বুকটি বেঁধে ফেলুন। এই স্ক্র্যাপ বুকটি দেখে পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো তাজা হয়ে উঠবে যেন ঠিক আগেরমতো করে। আর তাই স্মৃতির পাতায় ঘুরে আসার এই প্ল্যানটা কিন্তু কোনভাবেই বাদ দেয়া যাবে না!  

ঘর সাজুক রেড থিমে

যেহেতু দিনটি ভালোবাসার, তাই ঘর সাজানোর থিমটিও হোক রেড বা লাল রঙে। ঘর সাজানোর জন্য সবার প্রথমে লাগবে বেলুন। লাল, সাদা, কালো, গোলাপি এর মধ্যে থেকে পছন্দের রঙের বেলুন দিয়ে ঘর সাজিয়ে নিন। ফ্লোরে এক কোণে থাকুক বেশ কিছু বেলুন আর এর সাথে লাইটিং এর ব্যবস্থা করে নিন।

কর্নার ল্যাম্প, জার লাইট এর সাথে সুন্দর ঘ্রাণের মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে নিন বাসার বিভিন্ন জায়গা। আলো ছায়ায় ঘরের দেয়ালে থাকা ছবিগুলোও যেন আজ ভালোবাসার কথা বলে উঠে। ঘর সাজানোর সাথে সাথে থিম এর সাথে মিল রেখে পোশাকটিও হোক ভালোবাসার মানুষের পছন্দের। হয়তো এর আগে প্রিয় মানুষটির উপহার দেওয়া পোশাকটি পরবেন করেও পরা হয়নি, আজ কিন্তু সে সুযোগ মিস করা চলবে না!  

কেকটা হোক রেড ভেলভেট  

কেক বেক করা যদি আপনার পছন্দের হয়, তবে তো বিশেষ এই দিনের কেকটা বানানোর পুরো দায়িত্ব আপনি নিজেই নিয়ে নিবেন। তবে কেক বেক করতে না পারলেও কোনও সমস্যা নেই। আজকাল অনেক অনলাইন পেইজ বা দোকানও কাস্টমাইজড কেক বানায়। সে হিসেবে আপনিও কিন্তু পছন্দের ডিজাইনের কেক অর্ডার করতে পারবেন জাস্ট ফ্লেভারটা হতে হবে রেড ভেলভেট। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে কথা বলে অর্ডার দিয়ে দিবেন, যেন শেষ মুহূর্তে এসে কেক না পেয়ে মন খারাপ না হয়ে যায়। 

টাইম ফর ক্যান্ডেল লাইট ডিনার

ঘরের বাইরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ডিনার হয়তো আগে অনেকবারই করা হয়েছে। কিন্তু প্রিয় মানুষটির জন্য খুব যত্ন করে ঘরেই যদি একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করা হয়, তবে ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ হবে। এই ধরুন এক-দুইদিন আগে থেকেই অল্প অল্প করে ডিনার আয়োজনের প্ল্যানটা করে নিলেন। যেমন ধরুন, একটা থিম ঠিক করে নিলেন আর সেই থিমের সাথে মিলিয়ে পোশাকের রঙ ঠিক করলেন, ডিনারের সেটআপ আর মেন্যু ঠিক করে নিন আর এর সাথে রেড ভেলভেট কেক আর ফুলের তোড়া তো রাখতেই হবে। ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজনটা আরও সুন্দর করে তুলতে আরও কী কী করবেন জানতে লিংকে ক্লিক করে জেনে নিন আয়োজনের বিশেষ কিছু টিপস।  

নিয়ন আলোর সন্ধ্যায় প্রিয় মানুষটির সাথে ভালোবাসার মুহূর্তটা হোক স্মৃতিময়, ভালোবাসা দিবসে একজন আরেকজনের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞায় পথচলা হোক শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার। আর সেই সাথে গুনগুন করে বাজুক গান…     

“ভালোবাসি ভালোবাসি

এই সুরে কাছে-দূরে জলে-স্থলে বাজায়,

বাজায় বাঁশি,

ভালোবাসি ভালোবাসি…”।

যাদের আমরা ভীষণ ভালোবাসি তাদের জন্যই তো ভালোবাসার বিশেষ দিন। যেখানে থাকে আমাদের পরিবার বাবা-মা, ভাই-বোন এবং বন্ধুরা। আর তাই বিশেষ এই দিনে সবাইকে সাথে নিয়ে দারুণ একটা ডিনারের আয়োজন করলে কিন্ত বেশ মজার হবে। ডিনারের আয়োজনটা আমরা ঘরের ভিতরে বা বাড়ির ছাদে থাকা কমিউনিটি রুমেও করতে পারি অথবা পছন্দের যেকোনো রেস্টুরেন্ট তো আছেই। যদি রেস্টুরেন্টে ডিনারের আয়োজন করতে চান, তবে আগেভাগেই পছন্দের রেস্টুরেন্টে একটা বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। অথবা বেলুন, ফুল, লাইটিং আর কেকের অর্ডার দিয়ে ঘরেই ভালোবাসার সুন্দর একটা আমেজ করে নিতে পারেন। ব্যস্ততার ভিড়ে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে করা ছোট্ট এই আয়োজনটাই হয়তো স্মৃতি হয়ে থাকবে ভালোবাসার অংশ হয়ে।

তাছাড়া আমাদের বাবা-মা’রা তো প্রতিনিয়তই আমাদের জন্য কত কষ্টই না করে থাকেন। ভালোবাসার এই দিনে তাদেরকে যদি একটা শান্তির দিন উপহার দেয়া যায়, তবে কেমন হয় বলুন তো? যেমন ধরুন- বাসায় তাদের পছন্দের কোনও সিনেমা দেখার আয়োজন করে দিলেন, সকাল থেকে বাসার সব কাজ ভাইবোনরা মিলে করে ফেললেন, মজার রান্না করলেন আর তারা শুধু বিশ্রাম করলো, গান শুনলো, একসাথে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটালো, আর পুরনো দিনের অ্যালবাম ঘেঁটে স্মৃতির পাতা থেকে ঘুরে আসলো; ভাবতেই ভালো লাগছে, তাই না? তো দেরি না করে এখনই প্ল্যান করতে বসে যান।

আর এসবের মধ্যে ছোট ভাইবোনরা যেন মন খারাপ না করে, সেদিকেও যে খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে নিয়ে যেতে পারেন শপিং-এ, অথবা সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখার প্ল্যান করতে পারেন অথবা তাদের পছন্দের কোনও জায়গা থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। এতে করে সুন্দর একটি দিন যেমন কাটানো যাবে, তেমনি ছোটদের সাথে ভালোবাসার দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্কটা হবে আরও দৃঢ়।

আর বন্ধুরা তো ছিল, আছে, পাশে থাকবেই চিরকাল। প্রিয় বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ সরাসরি করা হোক বা না হোক, বন্ধুর জন্য একটা দারুণ উপহার কিনে সরাসরি তার বাসায় হাজির হয়ে তাকে চমকে দিন। সাথে রিবনে মোড়ানো একটি চকোলেটের বাক্স নিতে ভুলবেন না যেন!    

পরিবার, বন্ধু, অথবা প্রিয় মানুষ; ভালোবাসার প্রকাশ একেক জায়গায় একেক রকমভাবে হলেও, ভালোবাসার সংজ্ঞা কিন্তু একটাই। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো।

“হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে”

  •  
  •  
  •  
  •   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *