By Tasnim Jarin
প্রতিটি উৎসবেরই থাকে নিজস্ব রঙ, নিজস্ব পরিচয়। উৎসবের দিনটিকে আরও বিশেষ করে তুলতে, চলে কতশত পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, আয়োজন। ঠিক যেমনটি হয় বাংলা নতুন বছরকে ঘিরে। বাংলা নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ, সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই দিনটিকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। লাল-সাদার রঙে রাঙিয়ে যায় চারিপাশ। উৎসবের আনন্দ যেমন যেকোনো রঙকে ঘিরেই হতে পারে, তেমনি প্রতিটি উৎসবের জন্যও থাকে নির্দিষ্ট কিছু রঙ। আর তাই বাংলা নতুন বছরের কথা বলতেই সবার প্রথম চলে আসে লাল-সাদা এই দুইটি রঙ। যেখানে বৈশাখ আসে নতুন এক সংখ্যা নিয়ে, ভিন্ন পরিচয়ে।
বৈশাখে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে তাই আয়োজনটা কীভাবে করবেন? কী কী থাকবে বৈশাখের প্রস্তুতিতে, অতিথি আপ্যায়নে চলুন তবে প্ল্যানটা করে নেয়া যাক!
এই বছর বৈশাখের দিনটি যেহেতু রোজার মধ্য দিয়ে যাবে, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে কিছুটা ভিন্ন ভাবে। নতুন আরও একটি বছরে যাত্রা শুরু করার মুহূর্তে অর্থাৎ, সূর্যোদয়ের মুহূর্তটা উপভোগ করতে তাই আমরা ভোরবেলায় লাল-সাদা শাড়ি এবং পাঞ্জাবিতে রাঙিয়ে চলে যেতে পারি কোন পার্কে কিংবা পছন্দের কোন চত্বরে। ভোরবেলার পরিবেশটা যেহেতু খুব শান্ত এবং স্নিগ্ধ থাকে, তাই নতুন বছরকে বরণ করতে এর চেয়ে দারুণ ব্যাপার আর কি হতে পারে।
এবার যারা রোজা আছেন তারা পরবর্তী প্রস্তুতিটি না হয় ইফতারের সময় করে ফেলুন। আর বাকিদের ক্ষেত্রে পান্তা, ইলিশ ভাজা, ডালের বড়া, হরেক রকমের ভর্তার ডিশগুলো সাজিয়ে নিন মনের মতো করে। যেহেতু আয়োজনটা বাংলা নতুন বছরকে ঘিরে, তাই বরাবরের মতো কাঁচের বা সিরামিকের পাত্রে খাবার পরিবেশন না করে বরং, পুরো আয়োজনটা করুন, বাঁশ-বেতের, মাটির সব পাত্র দিয়ে। এর পাশাপাশি ডাইনিং টেবিল সাজাতে রাখতে পারেন তাজা ফুল, সুগন্ধি মোমবাতি, হারিকেনের ল্যাম্প। এছাড়া ঘরের বিভিন্ন জায়গায় মাটির ফুলদানি রেখে এর ভেতর ইনডোর প্ল্যান্টস রখতে পারেন এবং সাথে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রদীপ দিয়েও ঘর সাজিয়ে নিতে পারেন।
এছাড়া ঘরের বিভিন্ন কর্নারে বৈশাখের আমেজ ধরে রাখতে রঙিন কার্পেট, শতরঞ্জি, কুশন কাভার, পর্দা, থ্রো পিলো সহ বিভিন্ন জায়গা সাজিয়ে নিতে পারেন নতুন রূপে। তবে এসবের সাথে ক্রিয়েটিভ কিছু করলে কেমন হয়? মাটির ছোট–বড় বিভিন্ন সাইজের পাত্র এবং এর সাথে রঙ তুলি কিনে, এবার এই পাত্র গুলো মনের মতো ডিজাইনে এবং রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন। এবার লিভিং বা ড্রইং রুমের বিশেষ কোন কর্নার বেছে নিয়ে, সেখানে পাত্রগুলো দেয়ালে সাজিয়ে দিন। এর সাথে কাগজের কিছু ক্রাফটও চাইলে বানাতে পারেন। যেমন পেঁচা, কাগজের চাকা, ফ্যান, পাতা-ফুল সহ দারুণ দারুণ মজার সব কিছু। এক্ষেত্রে বাসার সবচেয়ে ছোট সদস্যও কিন্তু ঘর সাজানোর প্রজেক্টে সহায়তা করতে পারবে। তাই তার বানানো ক্রাফট এবং আঁকা ছবি দেয়াল কিংবা শেলফে রেখে দিন। এতে করে পুরো ঘরটিতেই যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করবে।
বৈশাখের সময়টয় যেহেতু গরমটা বেশি থাকে, তাই অন্যান্য সব আইটেমের সাথে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা শরবত হবে প্রাণ জুড়ানো। তাই খাবারের মেন্যুতে তরমুজ, লেবু-পুদিনার শরবত, আনারস, বা কাঁচা আমের শরবত রাখতে পারেন। এছাড়া এর সাথে মজাদার বাদামের শরবতও রাখতে পারেন, বরফের টুকরো দিয়ে পরিবেশন করুন ঠিক যখন অতিথিরা আসবে আপনার বাসায়। এতে করে তীব্র গরমের এই সময় এবং রোজা ভেঙে বেশ শান্তি পাওয়া যাবে। এছাড়া নানারকম মিষ্টি খাবার যেমন- গুড়ের পায়েস, দই, ছানার মিষ্টি, মণ্ডা, রসগোল্লা ইত্যাদিও তৈরি করতে পারেন।
বাংলা নতুন বছরের আগমনে পঞ্জিকার পাতায় এবার জায়গা করে নিবে নতুন একটি বছর। নতুন কোন স্বপ্ন নিয়ে শুরু হবে পথচলা। আর এ যাত্রায় পুরনো জরাজীর্ণ সময়টাকে ভুলে গিয়ে মঙ্গলের বার্তা নিয়ে আসুক ১৪২৯।
শুভ নববর্ষ!