by Tasnim Jarin
পুরো বছরটা যেমনই কাটুক না কেন, পুরতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেয়ার আগ্রহটা সবসময়ই থাকে। অনেক উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায় জড়ানো বছরটাতে আমাদের অপ্রাপ্তি আর হারানোর সংখ্যাটা দীর্ঘ হলেও, নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়েই হয় আমাদের পথচলা। আর এরই অংশ হয় বছরের শেষ দিনটি অর্থাৎ, থার্টি ফাস্টের রাতের আয়োজন।
ঘড়ির কাঁটায় সেকেন্ড, মিনিট আর ঘণ্টার একত্রিত হওয়া এবং সাথে সাথেই ২০২০ থেকে সংখ্যাটা বদলে ২০২১ হয়ে যাওয়ার এই মুহূর্তটা নিঃসন্দেহে বিশেষ। ক্যালেন্ডারের পাতায় শুধু দিন বা মাস নয়, জায়গা করে নিলো নতুন একটি বছর, নতুন কিছু প্রতিশ্রুতি নিয়ে পুরনোকে আরও একবার নতুন করে ভাবার আশায়।
তো গুরুগম্ভীর এসব কথার ভিড়ে, বছরের শেষ দিনটি কীভাবে সেলিব্রেট করা যায়, চলুন সে ব্যাপারে কিছু আইডিয়া নিয়ে কথা বলা যাক।
শুরুটা করছি ঘর সাজানো দিয়ে। যেহেতু সেলিব্রেশনটা বছর শেষের জন্য করা, তাই পুরনো মুহূর্তগুলো দিয়ে যদি কিছু বানানোর প্ল্যান করা যায়, তবে কিন্তু ব্যাপারটা দারুণ হয়। হয়তো ২০২০ সালে তেমন একটা কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি, কিন্তু তাতে কী হয়েছে? বিগত বছরের বিশেষ মুহূর্তগুলোর ছবি নিয়ে ঘরের একটা কর্নার সাজিয়ে নিন।
কাজিন, বন্ধুবান্ধব কিংবা ফ্যামিলির সাথে কাটানো সেসব মুহূর্তকে হাইলাইট করে ঘরে একটা ‘ফেভারিট কর্নার’ বানিয়ে নিন। কর্নারটাকে আরও সুন্দর করে তুলতে কিছু অরিগামি ক্রাফটসও বানিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে পম পম ক্রাফট, বাটারফ্লাই, কালারফুল হ্যান্ডমেইড ফ্যান হতে পারে দারুণ আইডিয়া। এছাড়া শুকনো ফুল এবং পাতা দিয়ে পুরো ঘর সাজাতে এই লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন দারুণ কিছু টিপস।
বর্তমান পরিস্থিতির কারণে রেস্টুরেন্ট কিংবা বড়সড় পরিসরে পার্টি করা সম্ভব না হলেও, বাসার ছাদে কিন্তু ছোটখাটো পার্টির আয়োজন করাই যায়। আর এই পার্টিতে খুব বেশি মানুষ না থাকলেও কাছের বন্ধুবান্ধব, পরিবারের মানুষ তো থাকতেই পারবে। আর শীতের এই সময়টাতে বারবিকিউ পার্টি জমেও উঠবে বেশ। তাই তো দেরি না করে, থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজনে বারবিকিউ পার্টির প্রস্তুতি আগেভাগেই নিয়ে ফেলুন। আপনাদের সুবিধার্তে কী কী উপকরণ লাগবে তার একটি তালিকাও দিয়ে দেয়া হলো।
উপকরণ: মুরগীর বড় পিস ৪ টুকরো করা (প্রয়োজনমতো সংখ্যা), পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, কারী মসলা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, জিরা গুঁড়া সামান্য, গোলমরিচ গুঁড়া সামান্য, মধু ১ চা চামচ, দই ১ চা চামচ, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ১ চা চামচ, সয়া সস ২ চা চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ পেস্ট ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণ অনুযায়ী। এছাড়া- শিক, কয়লা ও চুলা লাগবে।
প্রণালী: শুরুতে চুলায় কয়লা বিছিয়ে অল্প পরিমাণ কেরোসিন তেল ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নিতে হবে।
এবার ৪ টুকরো করে কাটা মুরগী ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ছুরি বা কাঁটা চামচ দিয়ে মাংসের উপরে একটু চিরে নিতে হবে যেন মসলাগুলো ভালোভাবে মাংসের ভেতরে ঢুকে। তারপর সব মসলা দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করে রেখে দিতে হবে কমপক্ষে ৪-৫ ঘণ্টা। শিকগুলো ধুয়ে তাতে তেল ব্রাশ করে মাংস গেঁথে নিয়ে চুলায় বসিয়ে শিকগুলো বারবার ঘুরিয়ে দিতে হবে এবং একটু পরপর তেল ব্রাশ করতে হবে। মুরগীর টুকরোগুলো যখন পোড়া হয়ে আসলে শিকগুলো চুলা থেকে নামিয়ে মাংসগুলো প্লেটে নিলেই বারবিকিউ পার্টির জন্য আপনি রেডি। সাথে পরোটা বা নান আর কোল্ড ড্রিঙ্কস থাকলেই আড্ডা জমে উঠবে বেশ।
তবে আপনারা যদি বারবিকিউ পার্টি না করতে চান, সেক্ষেত্রেও রয়েছে এর সমাধান। খাবারের মেন্যুতে রাখতে পারেন মোরগ পোলাও কিংবা কাচ্চি। অথবা সবাই মিলে একটা পিজ্জা পার্টিও করতে পারেন। আজকাল অনেকেই অনলাইন ফুড বিজনেস করছেন। এক্ষেত্রে পরিচিত কারো পেজ থেকে বাসার সবার এবং বন্ধুদের জন্য কিন্তু থার্টি ফাস্ট নাইটের পার্টির জন্য খাবার অর্ডার করতে পারেন। একদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার না কিনে আপনি যেমন ঘরে তৈরি খাবার খেতে পারছেন। অন্যদিকে তার বিজনেসের প্রমোশনও হয়ে যাচ্ছে। আইডিয়াটা খারাপ না, তাই না?
থার্টি ফাস্টের আয়োজনে একটা ফটো বুথ না রাখলে কি হয়? সেলিব্রেশন মানেই হলো ফটোশুট এর দারুণ সুযোগ। তাই বাসার কোনও একটি নির্দিষ্ট কর্নারকে ফটো বুথ স্পেশাল বানিয়ে ফেলতে পারেন। ফটো বুথে থাকতে পারেন হোম মেইড ফটো ফ্রেম, প্রপস এবং বেকড্রপ।
ফটো ফ্রেমের জন্য একটা বড় কার্ডবোর্ড নিয়ে একটা বড় ফটো ফ্রেমের আকৃতি অনুযায়ী কেটে নিয়ে এর মধ্যে আঠা দিয়ে রঙিন চার্ট পেপার বা গোল্ডেন-সিলভার পেপার কেটে নিয়ে ফ্রেমের আকার অনুযায়ী বসিয়ে দিতে হবে। এবার ফ্রেমের উপর ছড়িয়ে দিন কিছু গ্লিটার। ব্যাস হয়ে গেলো!
এছাড়া সিলভার-গোল্ডেন ব্যাকড্রপে বেলুন দিয়েও কিন্তু সাজিয়ে নিতে পারেন আর এর সাথে মজার কিছু প্রপস রাখলে ফটোশুটের মজাই হবে আলাদা।
থার্টি ফার্স্টের আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে কাউন্ট ডাউন এর সাথে আতশবাজি এবং ফানুসে আকাশ হয়ে উঠুক আলোকিত। হিসাবের খাতায় ২০২০ এর অংক যেমনই হোক না কেন, অবশেষে সময় এসেছে এই বছরটিকে বিদায় জানানোর। ভালো কিছুর আশায় ২০২০ সালের সব প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে সাথে নিয়ে ২০২১ সাল আসুক নতুন করে।
হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২১!