By Tasnim Jarin
ঋতুভেদে প্রকৃতিতে আসে পরিবর্তন। শীতের শেষে ঋতুর খাতায় জায়গা করে নেয় বসন্ত, যাকে আমরা ফাল্গুন মাস নামে জানি। শীত শীত আবহাওয়ার রেশ কাটিয়ে প্রকৃতির মাঝে নতুন পাতারা জায়গা করে নেয়। বিভিন্ন ধরনের ফুলে ভরে যায় চারপাশ। প্রকৃতি যেন নতুন এক রূপে ধরা দেয় এ সময়। আর সে সময়টাকে উদযাপন করতে তাই চলে নানান ধরনের আয়োজন।
হলুদ, লালচে কমলা, হলদে-সাদা এবং লাল রঙের ফুলের আনাগোনা যেমন প্রকৃতির মাঝে এ সময় চোখে পড়ে। তেমনি ফাল্গুন উদযাপনের অংশ হিসেবেও এই রঙগুলো জায়গা করে নিতে পারে অন্দরেও। আর তাই ফাল্গুন উদযাপনে অন্য রঙের তুলনায় হলুদ রঙের প্রাধান্যই বেশি থাকে এই সময়টাতে। হলুদ রঙের বিভিন্ন শেডের মধ্য বাসন্তী, হালকা হলুদ, সরষে হলুদ ছাড়াও রয়েছে ড্যাফোডিল, বাটার, বাটারস্কোচ, হানি, ব্লন্ড এবং পাইনাপল ইত্যাদি বিভিন্ন শেড। বেশ পরিচিত এই শেডগুলো হলুদ রঙেরই বিভিন্ন রূপ মাত্র।
ঘরের বিভিন্ন জায়গা সাজাতে তাই ফাল্গুনে ব্যবহার করতে পারেন রঙিন সব ফুল। এক্ষেত্রে লিভিং রুম বা ড্রইং রুমের একটি কর্নার বেছে নিতে পারেন। ফুল দিয়ে সাজানোর জন্য সাদা বা ক্রিম রঙের দেয়াল বেশি মানানসই হয়। ফুলের রঙ এ ধরনের দেয়ালে বেশি ফুটে উঠবে। চাইলে স্ট্রিং এর মধ্যে ফুল ঝুলিয়ে দিতে পারেন। অথবা যদি ফ্লোর ফুল দিয়ে সাজাতে চান তবে কাঁসা, মাটি বা ক্রিস্টালের কোন পাত্রের বা প্লেটের মধ্যে কিছুটা পানি নিয়ে তার মধ্যে ফুল রাখতে পারেন। আর এর মধ্যে ছোট ছোট ডেকোরেশন এর মোমবাতি রাখলে তা দেখতেও বেশি সুন্দর লাগবে।
এছাড়া শুধু ফ্লোরে হারিকেন ডিজাইনের ল্যাম্প রেখে এর আশেপাশে ফুল দিয়েও ডেকোরেশন করতে পারেন। দেখতে অনেক সুন্দর দেখাবে। দেয়াল সাজানোর আরেকটা দারুণ আইডিয়া হল, পুরনো শাড়ি দিয়ে সাজানো। ফাল্গুনের শাড়ি যেহেতু কালারফুল হয়, তাই আপনার পুরনো কোন ফাল্গুনের শাড়ি ভাঁজ ভাঁজ করে দেয়ালে বা কোন ব্যাকগ্রাউন্ডে ডিজাইন করতে পারেন। এতে দেখতে বেশ ইউনিক দেখাবে। আর সাথে তো ফুল আছেই!
ঘর সাজানোর জন্য ছোট ছোট আলোকবাতি বা মরিচ বাতি অনেক জনপ্রিয়। যেকোনো উৎসবেই চমৎকার এই আলো যেন উৎসবের আনন্দকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। আর তাই পছন্দের ডিজাইনের এবং রঙের বাতিগুলো ঘরের দেয়ালে, নির্দিষ্ট কোন কর্নার ডেকোরের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া অন্দর সাজানোর জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় একটি জিনিস হল কুশন, রাগস এবং ম্যাট দিয়ে সাজানো। ফাল্গুন মানেই যেহেতু নতুনত্বের আহ্বান, তাই সতেজতা এবং নতুনত্বে রঙ দিয়ে সাজাতে বিভিন্ন ডিজাইনের কুশন, রাগস এবং ম্যাট ঘরে উৎসবের ভাব নিয়ে আসবে।
এছাড়া মাটির পাত্র এবং কাঁসার সার্ভিং ডিশ দিয়েও ডাইনিং রুমের টেবিল সাজাতে পারেন। এতে করে বাঙালিয়ানা একটা আমেজ যেমন ফুটে উঠবে, তেমনি প্রতিদিনের আয়োজন থেকে ফাল্গুনের আয়োজনে আসবে ভিন্নতা।
ফাল্গুন বা বসন্তে প্রকৃতিতে যেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, তেমনি অন্দরমহলের দেয়াল জুড়েও রাখা যায় ফাল্গুনের ছোঁয়া। প্রকৃতির ফুলের সমাবেশ চাইলে ঘরের দেয়াল ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সেটি সম্ভব হবে যদি ঘরের দেয়ালে ফ্লোরাল থিম ইলিউশন করানো হয়। এক্ষেত্রে হালকা কিংবা গাঢ় হলুদের যেকোনো শেডেই সাজিয়ে নিতে পারেন অন্দরের চার দেয়াল।
পঞ্জিকার পাতা থেকে শীত বিদায় জানানো মাত্রই বসন্তের দেখা পাওয়া যায়। প্রকৃতির এই পালাবদলে ফুল ফোটায় দেরি হলেও ফাল্গুনের উৎসব উদযাপনে কোনও বিলম্ব হয় না। আর তাই ফাল্গুনের প্রস্তুতি নিতে কী কী করবেন তা আগে থেকেই ভেবে রাখা প্রয়োজন। ফাল্গুনের রঙে চারিদিকে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। আর সেটি কয়েকগুণ বেড়ে যায় যখন উৎসবের এই রঙে রঙিন হয়ে উঠে অন্দরের প্রতিটি জায়গা।