by Tasnim Jarin
হোক সেটা বিশেষ কোনোদিন কিংবা মুহূর্ত, বিশেষ দিনটিকে আরও বিশেষ করে তুলতে একটা ডিনারের প্ল্যান না করলেই নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা ভাবাটাও বেশ দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে সেলিব্রেশন তো আর বন্ধ রাখা যাবে না, তাই না?
রেস্টুরেন্টে না হোক, ডিনারের আয়োজনটা না হয় এখন ঘরেই হোক নিশ্চিন্তে। আর এজন্য প্রয়োজন বিশেষ কিছু প্রস্তুতির।
শুরুটা করা যাক ডাইনিং টেবিলের সেটআপ দিয়ে। আপনার যদি টোনাটুনির সংসার হয়ে থাকে, তবে ডিনারের আয়োজনের আগে টেবিলের সেটআপটা না হয় একটু বদলে নিন। রুমের মাঝে টেবিল থাকলে তা একটা সাইডে সরিয়ে নিন। বিশেষ করে দেয়াল আছে এমন পাশে। সাধারণত দেয়ালে ফটোফ্রেম লাগাতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। আর জীবনের সেই সুন্দর মুহূর্তের ছবিগুলো যে দেয়ালে আছে, তার পাশেই ডিনারের আয়োজন করলে তা রেস্টুরেন্ট এবং বাসার, দুই ধরনের অনুভূতিই দিবে। যেহেতু রেস্টুরেন্টের দেয়ালেও ছবি কিংবা কোটেশন লেখা থাকে, তাই বাড়তি সুবিধা হিসেবে ঘরে আপনি নিজের পছন্দমতো ছবি দিয়ে দেয়াল সাজাতে পারবেন।
সাধারণত ছবির দেয়ালের পাশেই ফোকাস লাইটের ব্যবস্থা থাকে। আপনি চাইলে মরিচ বাতি, স্ট্রাইপ লাইট কিংবা যেকোনো ডেকোরেশন লাইট দিয়েও ডিনার টেবিলের পাশ সাজাতে পারেন, তবে খুব বেশি আলো না থাকলেই বরং ভালো, যেমনটা রেস্টুরেন্টে দেখা যায়।
ডিনারের আয়োজনে ফ্যান্সি কিছু লাইটের ব্যবস্থা না থাকলে যেন পরিবেশটা ঠিকমতো জমে উঠবে না। আর তাই তো ডিনার টেবিল থেকে রুমের কর্নার এবং দেয়াল জুড়ে থাকা চাই মায়াবী আলোর উপস্থিতি।
ডিনারের আয়োজনে হালকা সোনালি আভার মরিচা বাতি দিয়ে দেয়ালের উপরের দিকে, পর্দার সামনে কিংবা উইন্ডো গ্লাস সাজিয়ে নিয়ে পারেন। লম্বায় ১২ ফুট থেকে শুরু হওয়া মরিচ বাতির একেকটির দাম শুরু ১৫০ টাকা থেকে। পাঁচ মিটার দৈর্ঘ্যের ফিতায় থাকা মরিচ বাতির দাম পড়বে ৮০০ টাকার মতো। এছাড়া রুমের কর্নারের জন্য ২-৩টি জার লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া একটু ভিন্নভাবে সাজাতে চাইলে মরিচা বাতির জায়গায় ক্লিপ লাইটও ব্যবহার করতে পারেন। যদি ডাইনিং এর পাশের দেয়ালে ফটোফ্রেমের ব্যবস্থা না থাকে, তবে ক্লিপ লাইটে সুন্দর মুহূর্তের ছবিগুলো দিয়ে সাজাতে পারেন। যদিও এই ব্যবস্থা রেস্টুরেন্টে থাকবে না। তবে আয়োজনটা যেহেতু বাসায় করছেন, তাই আলাদা কিছু তো করাই যায়!
আর এরকম ক্লিপ লাইট কিনতে চাইলে ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একেকটির দাম ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে, যা আপনি অনলাইন পেজ থেকে শুরু করে গুলিস্তান, নিউমার্কেট-সহ আলোকসজ্জার যেকোনো দোকানে পেতে পারেন।
ডিনারের আয়োজনে মেন্যু তালিকায় কী রাখবেন তা আগে থেকেই ভেবে নিন। এবার রেস্টুরেন্টের মতো করে মেন্যুর তালিকা কম্পিউটারে ডিজাইন করে কালার প্রিন্টেড পেপারটি লেমিনেটিং করে নিন, মনে হবে যেন রেস্টুরেন্টেই আছেন। তবে একটু ভিন্ন কিছু করতে চাইলে কালারফুল স্টিকি নোটসে একেকটি নাম লিখে তা বোর্ডে এঁটে দিতে পারেন, এটাও দেখতে মজার হবে।
ডিনারের আয়োজন হবে আর সেখানে ফুল থাকবে না, তা কি হয়? কয়েক রকমের ফুলের তোড়া হোক কিংবা, পছন্দের নির্দিষ্ট কোন তাজা ফুল আর সাথে আশেপাশে ছড়ানো কিছু পাপড়ি আর মোমবাতি, এক কথায় দারুণ! ফুলের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন কয়েক রঙের গোলাপ। হালকা গোলাপি, হলুদ কিংবা লাল গোলাপ তো থাকছেই, অন্যথায় অর্কিড ফুল তো আছেই।
আর মোমবাতির জন্য ছোটবড় বিভিন্ন ডিজাইন থেকে আপনার পছন্দেরটি বেছে নিতে পারেন। মোমবাতিগুলো কালারফুল হলে তা দেখতে সুন্দর দেখাবে, তবে সাদা বা সিলভার-গোল্ডেন ডিজাইনেরও কিনতে পারেন। সাজানোর জন্য সুগন্ধিযুক্ত গোলাকৃতির বা গ্লাস জার মোমবাতিও ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপ, জুঁই, ল্যাভেন্ডার, সাইট্রাস, লেমন গ্রাস ও দারুচিনির গন্ধের মোমবাতি থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দেরটি। সুগন্ধি মোমবাতি রাখতে হবে ডাইনিং টেবিল থেকে কিছুটা দূরে, যেন খাবারের গন্ধের সঙ্গে মোমের সুগন্ধ মিশে না যায়। ছোট আকৃতির মোমবাতি ৮০ থেকে ২০০ টাকা আর ডেকোরেটিড মোমবাতি ৫০০ থেকে এক/দেড় হাজার টাকার মধ্যে আড়ং, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও গিফট শপে পাওয়া যাবে।
এবার আসি ডিনার স্পেশাল কার্ডের কথায়। আর্চিস, হলমার্ক-সহ অনলাইনের বিভিন্ন পেজ থেকে আপনি ডিজাইন এবং থিম অনুযায়ী কার্ড কিনতে পারেন। তবে নিজে হাতে একটা স্পেশাল কার্ড বানিয়ে ফেললে, ব্যাপারটা কিন্তু জমবে বেশ। খুব বেশি সময় বা জিনিস লাগবে এমন নয়। চার্ট পেপার, কালার পেন, ওয়াশি টেপ, গ্লিটার, রিবন আর অনলাইন থেকে দারুণ কিছু ডিজাইন দেখে আপনি নিজেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে কার্ড বানাতে পারবেন। তবে ডিনারের প্ল্যানটা ঠিক কী কারণে করেছেন, তা নিয়ে দুই-তিন লাইন লিখতে ভুলবেন না যেন!
ডিনারের আয়োজনটা যদিও ঘরে হচ্ছে, তবে রেস্টুরেন্টের মতো আগে থেকেই পরিপাটিভাবে টেবিলে প্রত্যেকটি সেট সাজিয়ে রাখতে হবে। ন্যাপকিন থেকে শুরু করে, ডিনারওয়্যার, ফর্ক-নাইফ-স্পুন, আর সাথে আপনার কালেকশনে থাকা ইউনিক ডিজাইনের গ্লাসগুলো, ডিনারের আয়োজনে সবকিছু প্রস্তুত থাকা চাই; যেন ডিনারের মুহূর্তটা কাটানো যায় একদম নিজেদের মতো করে।
অবশেষে ডিনার আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য, গল্পের সাথে সাথে মজার খাবার উপভোগ করা। যদিও মেন্যু তালিকায় কী থাকবে তা একান্তই নির্ভর করবে আপনার পছন্দের উপর, তবে বোনাস হিসেবে থাকছে কিছু আইডিয়া।
স্টার্টারে শুরু করতে পারেন থাই প্রন স্যুপ, ক্রিম অফ মাশরুম অথবা ফ্রেঞ্ছ অনিওন স্যুপ সাথে চিকেন অথবা ভেজিটেবল ডামপ্লিংস দিয়ে।
মেইন কোর্সের মেন্যুতে রাখতে পারেন চিকেন ক্যাশনাট সালাদ, বিফ স্টেক উইথ ম্যাশ পটেটো অথবা পিজ্জা কিংবা বেকড পাস্তা সাথে চিলিং লেমোনেড। কোরিয়ান বা চাইনিজ ফুড যদি আপনার পছন্দের তালিকায় থেকে থাকে, তবে মেন্যুতে রাখতে পারেন কোরিয়ান বারবিকিউ চিকেন উয়িংস সাথে কিমচি ফ্রাইড রাইস।
সবশেষে যে খাবারটির কথা না বললেই নয়, তা হলো ডেজার্ট। বলা হয়ে থাকে, ‘বাকি আর যা কিছুই খাও না কেন, ডেজার্টের জন্য পেটে একটা বিশেষ জায়গা আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হয়।’ কথা সত্য! তো যেই ভাবা সেই কাজ। যদিও একেকজনের পছন্দ একেক রকম, তবে ডেজার্টের জন্য মেন্যুতে রাখতে পারেন তিরামিসু, ব্লুবেরি চিজ কেক অথবা ব্রাউনি উইথ আইসক্রিম।
রেস্টুরেন্টে না গিয়ে ঘরেই ডিনারের আয়োজনটা আরও স্পেশাল করে তুলতে আপনি চাইলে আউটডোরেই এর একটা ব্যবস্থা করতে পারেন। জায়গাটা হতে পারে বাসার বারান্দা কিংবা ছাদ। আর এ জন্য দরকার একটা ফোল্ডিং টেবিল। ভাঁজ করে রাখা যায় এমন একটি টেবিল আপনি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় সেটআপ করতে পারবেন। আর তাই বাকি সব প্রস্তুতি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে, দূরের শহুরে আলোয় আকাশের মিটিমিটি তারা দেখতে দেখতে একটা রোমান্টিক ডিনারের আয়োজন কিন্তু করাই যায়, তাই না?
তো জেনেই নিলেন, কীভাবে সহজে এবং ঝামেলাহীন ভাবে আপনিও এখন ঘরে ডিনারের আয়োজন করতে পারেন। আর তাই রেস্টুরেন্টে যাওয়া হচ্ছে না বলে এখন আর কোন ডিনার প্ল্যানই বাতিল করা যাবে না। বরং, রেস্টুরেন্টের মতো করে ঘরেই আয়োজন করে নিতে পারেন সারপ্রাইজ ডিনার পার্টি, হোক সেটা একান্ত দুজনের কিংবা পুরো পরিবারের সাথে। তো ডিনারের প্ল্যানে আপনি কী করছেন, জানাতে ভুলবেন না যেন!