কেমন হবে পিকনিকের আয়োজন? - Berger Home Diaries
parallax background

কেমন হবে পিকনিকের আয়োজন?

By Tasnim Jarin

শীতকালে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার যেমন সময়, তেমনি সন্ধ্যা নামার পরে বন্ধুরা মিলে ব্যাডমিন্টন না খেললেই যেন নয়। তবে আরও একটা কারণেও কিন্তু শীতের মৌসুম আসার অপেক্ষায় থাকে অনেকে, সেটা কী? বলছি পিকনিকের কথা। শীতকাল আসবে, আর বন্ধুরা মিলে কিংবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোনও পিকনিকের আয়োজন করা হবে না, তা কি হয়? না, একদমই হয় না!

তবে বর্তমান সময়ে যেকোনো পিকনিক কিংবা পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে ভিড় বা লোকসমাগম বেশি হয়, এমন জায়গা অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু তাই বলে কি পিকনিকের আয়োজন বন্ধ থাকবে? অবশ্যই না। বরং, এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা বিচক্ষণতার সাথে পরিকল্পনা করা উচিত পিকনিকের পুরো আয়োজন।

পিকনিকে কোথায় যাওয়া যায়?

অন্যান্য বছরের থেকে এ বছরের শুরুটা কিছুটা ভিন্ন। পরীক্ষা শেষে নিয়ম করে স্কুল-কলেজের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও, ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা কিংবা অনেকের একসাথে জমায়েত এখন আর হচ্ছে না আগের মতো করে। আর সে সাথে সাবধানতা অবলম্বন করে ঘরের বাইরে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে সচেতনতার সাথে। আর তাই পিকনিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। জায়গা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে মানুষের ভিড় কম হবে এমন জায়গা বেছে নেয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে যদি ঢাকা থেকে যাওয়া হয়, তবে ঢাকার আশেপাশে যেমন- গাজীপুর, আশুলিয়া, পুবাইল, নারায়ণগঞ্জের পিকনিক স্পটগুলোতে যেতে পারেন। সারাদিনের জন্য গাড়ি বা মিনি বাস ভাড়া করে নির্ধারিত স্পটে যেতে পারবেন।

পিকনিক স্পট বা রিসোর্ট হিসেবে গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, নুহাশপল্লী, রাঙ্গামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট, হ্যাপি ডে ইনন, জল জঙ্গলের কাব্য, রিসোর্ট নক্ষত্রবাড়ি, আরশিনগর হলিডে রিসোর্ট, ছুটি রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট, জঙ্গলবাড়ী পিকনিক স্পট, রূপগঞ্জের জিন্দাপার্ক, সোনারগাঁও এর পানাম নগর, ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জের পদ্মা রিসোর্ট লৌহজং, মেঘনা ভিলেজ রিসোর্ট ইত্যাদি বেশ সুপরিচিত।

পরিবারের সাথে, অফিস পিকনিক কিংবা বন্ধুরা মিলে যাওয়ার জন্য এর মধ্যে পছন্দমতো যেকোনো স্পটই বুকিং দিতে পারেন। তবে পিকনিকের তারিখ ঠিক করে অবশ্যই এক/দুই মাস আগে থেকেই রিসোর্ট বা স্পট বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। আর যদি একরাত সেই রিসোর্টে থাকতেও চান, সে ব্যাপারেও আগে থেকে ভেবে রাখতে হবে। কোলাহলের এই শহর থেকে দূরে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে দারুণ কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য শীতের এই সময়টা কিন্তু বেশ ভালো। আর তাই দেরি না করে, বিস্তারিত যেকোনো তথ্য জানতে গুগল থেকে পছন্দের রিসোর্টের ওয়েবসাইট ঘুরে জেনে নিন প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য।   

বাজেট ঠিক আছে তো?

পরিবারের সাথে পিকনিকে গেলে সাধারণত বাজেট নিয়ে অতটা ঝামেলা না হলেও, অফিস পিকনিক কিংবা বন্ধুরা মিলে পিকনিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগে থেকে বাজেট ঠিক করা প্রয়োজন। বন্ধুদের সাথে গেলে মাথাপিছু দুই/তিন হাজার টাকা ধরে সেক্ষেত্রে পিকনিকের পরিকল্পনা করতে পারেন। যদি সবকিছু মিলে বাজেট কম লাগে তবে তো ভালোই, অন্যথায় হয়তো কিছু টাকা যোগ করতে হতে পারে। আর তাই স্পট ফি, গাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ সাথে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের হিসাব একসাথে করেই বাজেট ঠিক করতে হবে। অন্যদিকে, অফিস পিকনিকের ক্ষেত্রে মানুষ যেহেতু বেশি থাকবে, সে অনুযায়ী বাজেটও বড় হবে। সেক্ষেত্রে সুইমিংপুল এবং খেলার জায়গা আছে এমন রিসোর্ট বা পিকনিক স্পট অফিসের বাজেট অনুযায়ী ঠিক করা যেতে পারে। 

পিকনিকের বাজার-সদাই

একটা সময় ছিল যখন পিকনিকে যেতে মানুষ বাসা থেকে অনেক খাবার বানিয়ে নিয়ে যেতো। আজকাল যদিও এর প্রচলন খুব একটা নেই। কেননা অনেক রিসোর্ট কিংবা পিকনিক স্পটে বাইরের খাবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি থাকে না। সেক্ষেত্রে রিসোর্টের ভেতরের রেস্টুরেন্টই ভরসা। তাছাড়া পিকনিক করতে যাওয়ার সময় সাথে রান্না করা খাবার নেয়াটা ঝামেলার বিষয়ও বটে। তাই তো দিনটিকে ভালোভাবে উপভোগ করতে চাইলে এত ঝামেলায় না যাওয়াই উত্তম। তবে জার্নিতে খাওয়ার জন্য চকোলেট বক্স, চিপস, ফল, স্যান্ডউইচ, পানি, টিস্যু বক্স, ডিসপোসেবল গ্লাস, মাস্ক, স্যানিটাইজার, চাদর বা ম্যাট, সেলফি স্টিক, পাওয়ার ব্যাংক, কিছু খেলাধুলার সরঞ্জাম আর একটা খাবার রাখার ঝুড়ি ইত্যাদি আগেভাগেই কিনে রাখতে হবে, যেন শেষ মুহূর্তে ভুলে না যান।

আউটডোর গেমস

পিকনিকে যাওয়া হবে আর আউটডোর গেমস খেলা হবে না তা কী করে হয়! পিকনিকের মজাই আসলে সারাদিন ঘোরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, গল্প করে এবং ছবি তুলে সবাই একসাথে মজার কিছু গেমস খেলা। এক্ষেত্রে পিকনিক স্পটটা যদি বড় হয়, তবে ক্রিকেট, ফুটবল বা ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা অনেক রিসোর্টেই থাকে, যা আগে থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন।

অন্যথায় পিলো পাসিং, গানের আসর অথবা পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ধরনের মজার কোনও গেমসের আয়োজন নিজেরাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু কাগজ নিয়ে এর মধ্যে মুভির নাম, গান কিংবা কৌতুক বলতে হবে, এমন কিছু জিনিস লিখে চিরকুটগুলো একটা বাক্সে ভরে নিন। এবার চিরকুট অনুযায়ী প্রত্যেককে পারফর্ম করতে হবে। সবার গণভোটে সবশেষে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড নির্বাচিত করে নিন, তবে বাকিদের জন্যও কিছু সান্ত্বনা পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখতে পারেন, এতে মজাই হবে কিন্তু! 

টুকটাক উপহার

যেহেতু পিকনিক করতে বাসা থেকে দূরে যাওয়া হচ্ছে তাই সাথে করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হালকা উপহারই বেস্ট হবে। যদি বন্ধুরা মিলে পিকনিকে যান তবে তো মজার সব উপহারের প্ল্যান করাই যায়। যেমন ধরুন, কোনও বন্ধু অল্পতেই বেশ ইমোশনাল হয়ে যায়, তার হাতে র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিন। খুশি হয়ে জলদি করে প্যাকেট খুলে সে দেখলো ভিতরে কিনা টিস্যু পেপার! আর একটা চিরকুটে লেখা, “নে বাবা এবার বেশি করে কান্নাকাটি কর”, হাহাহ! তবে যদি ভালো কোনও উপহারের আইডিয়ার কথা বলা হয়, তবে বই, নোটবুক, পারফিউম, ফটো ফ্রেম হাতে বানানো কোনও ক্রাফটস; এ ধরনের উপহার সাধারণত কাছের বন্ধু কিংবা পরিবারের মানুষকে দেয়া যায়, আশা করছি পছন্দ করবে।    

আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে পরিবারের সবাই মিলে কিংবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর মতো সময় হয়তো আমরা বের করতে পারিনা। তবে শত ব্যস্ততার মাঝে শীতের এই মৌসুমে যদি একটা পুরোদিন রাখা যায় শুধুমাত্র বন্ধুদের নামে কিংবা পরিবারের জন্য, তবে কিন্তু বছরের শুরুতে মুডটা একেবারে ফ্রেশ হয়ে যাবে। তাই আর দেরি না করে, চটজলদি কাগজ-কলম নিয়ে সবাই একসাথে বসে পড়ুন আর ভেবে নিন কেমন হবে আপনাদের পিকনিকের আয়োজন!  

  •  
  •  
  •  
  •   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *