By Tasnim Jarin
ঈদ এর আয়োজন মানেই বাহারি স্বাদের খাবারদাবারে ভরপুর সময়। ঈদের দিন সকাল থেকেই চলে খাওয়া-দাওয়া, গল্প-আড্ডা, প্রতিবেশি এবং আত্মীয়স্বজনের বাসায় যাওয়া এবং মজাদার সব খাবার খাওয়া। যদিও রোজার ঈদে আয়োজনটা থাকে এক ধরনের, তবে কোরবানির ঈদে এই আয়োজনের পুরোটা জুড়েই যেন থাকে গরু এবং খাসির মাংসের বাহারি আয়োজন। আর এই আয়োজনের পাশাপাশি অতিথি আপ্যায়নে চলে নানা ধরনের প্রস্তুতি।
ঈদের আমেজে ঘরে অনেক ধরনের রান্না হবে এটাই স্বাভাবিক। ঈদের নামাজ শেষে মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন- সেমাই, জর্দা, পুডিং, কুনাফা ইত্যাদি দিয়ে সকালের খাবার খাওয়া শেষে আর ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই কোরবানির কার্যক্রম নিয়ে। আর এসব কিছু শেষে রাতে বাসায় যেমন হয় অতিথির আগমন, তেমনি আমরাও যাই আমাদের আত্মীয়দের বাসায়। কোরবানির ঈদের ব্যস্ততা শেষে অনেকেই আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় করে উঠতে পারেন না। তাই বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য পরের দিনটি না হয় বরাদ্দ রাখুন। আর ঈদের দিনটি কাটুক অতিথি আপ্যায়নে এবং পরিবার এবং আত্মীয়দের সময় দিয়ে।
ঈদের দিন বাসায় অতিথি আসবে, তাই ডাইনিং টেবিলের সেটআপ নিয়ে আগে থেকেই ভেবে রাখুন। রুমের মাঝে থাকা টেবিলের মাঝখানে ফুলদানিতে কিছু ফুল রাখতে পারেন। আর এর পাশে সুন্দর কোন ডেকোরেশন পিস। আগে থেকেই পরিপাটিভাবে টেবিলে প্রত্যেকটি ডিনারের সেট সাজিয়ে রাখুন। সাথে ন্যাপকিন থেকে শুরু করে, ডিনারওয়্যার, ফর্ক-নাইফ-স্পুন, আর গ্লাসগুলো গুছিয়ে আলাদা কোন ট্রলি বা ট্রে-তে রাখুন।এ্তে করে অতিথি আসলে কোনধরনের হুড়োহুড়ি লাগবে না।
এবার আসি খাবারের মেন্যুতে। যেহেতু কোরবানির ঈদ, তাই ঈদের দিনের প্রধান খাবারের তালিকায় গরু বা খাসির মাংস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। দুপুরের আয়োজনের জন্য না হলেও রাতের আয়োজনে রাখতে পারেন চালের রুটি। যদিও গরু বা খাসি দিয়ে একেকজন একেক ভাবে রান্না করতে পছন্দ করেন। তবে আমাদের আজকের আয়োজনে ঈদের রান্নাবান্নার অংশ হিসেবে বেশ পরিচিত এবং মজাদার দুইটি রেসিপি দেয়া হলো। ঈদের আয়োজনে অতিথি আপ্যায়নে অন্য কিছু রান্নার পাশাপাশি গরু এবং খাসির মাংসের এই দুইটি আইটেম আপনিও চাইলে বানাতে পারেন। আর এই দুইটি আইটেমের একটি হলো কাটা মসলা দিয়ে গরুর মাংস রান্না এবং খাসির শাহী রেজালা বানানোর প্রক্রিয়ার বিস্তারিত।
উপকরণ- গরুর মাংস ২ কেজি, পেঁয়াজকুচি ৩ কাপ, বেরেস্তা ২ কাপ, আদা ২ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ, গোলমরিচ, কাঁচা মরিচ, লেবুর রস, দারুচিনি এলাচি, লবঙ্গ, তেজপাতা, আলু বোখারা, টমেটো কুচি, ভাজা শুকনা মরিচের গুঁড়া, হলুদগুঁড়া, লবণ, ঘি এবং সরষের তেল।
প্রণালি- মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে প্রথমে বেরেস্তা, লেবুর রস, ভাজা মরিচের গুঁড়া, ও কাঁচা মরিচ বাদে নাকি সব উপকরণ দিয়ে মাংস ভালোভাবে মেখে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এবার মাংস রান্নার হাঁড়িতে ঝরানো মাংস ঢেলে পরিমাণ মতো গরম পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। মাংস কষিয়ে গরম পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করে তাতে পেঁয়াজ বেরেস্তা, লেবুর রস, কাঁচা মরিচ ও ভাজা মরিচের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে রেখে কিছুক্ষণ পর চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। ঈদের দিন কাটা মসলায় গরুর মাংসের এই রেসিপির সাথে পোলাও বা চালের রুটি কিন্তু জমবে বেশ।
উপকরণ- খাসির মাংস ২ কেজি, টক দই, ঘি, লবণ পরিমাণ মতো, বেরেস্তা ১ কাপ, পোস্ত বাটা ২ টেবিল চামচ, মিষ্টি দই ১ কাপ, আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, ধনে গুড়া, মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া-১ টেবিল চামচ, এলাচ, লবঙ্গ, জয়ত্রী গুড়া অর্ধেক চা-চামচ, গোলমরিচ, দারচিনি, জয়ফল আধা চা-চামচ, কাজু বাদাম ও পেস্তা বাদাম ৪ টেবিল চামচ, দুধ ১ কাপ, কিসমিস ১০/১২টি, আলু বোখারা ৬টি।
প্রস্তুত প্রণালী- মিষ্টি দই এর সাথে কাজু বাদাম ও পেস্তা বাদাম দিয়ে ব্লেন্ডারে খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিয়ে একটি পাত্রে মাংস নিয়ে তার মধ্যে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে খুব ভালোভাবে হাত দিয়ে মেখে ম্যারিনেট করতে হবে। এবার ঢাকনা দিয়ে ৩০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। চুলায় হাঁড়িতে পরিমাণ মতো ঘি দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা মাংস ঢেলে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে এবং অনবরত নাড়তে হবে। ২০ মিনিট রান্না করতে হবে। অতঃপর ১ কাপ দুধ দিতে হবে। আলাদাভাবে কোন পানি না দিয়ে ধীরে ধীরে মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল বেশ ঘন হয়ে আসবে। এরপর আলুবোখারা দিয়ে দিতে হবে। এই পর্যায়ে দই এবং বাদামের পেস্ট দিয়ে দিতে হবে। এরপর কিসমিস দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিয়ে চুলা বন্ধ করে কিছুসময় রেখে দিতে হবে। ব্যাস, মজাদার খাসির শাহী রেজালা প্রস্তুত।
বিরিয়ানি, তেহারি এবং কাবাব্রের পাশাপাশি এই দুইটি আইটেমের যেকোনটি আপনিও চাইলে ঈদ উৎসবে রান্না করতে পারেন। ঈদের উৎসব মানেই পরিবার, আত্মীয় এবং বন্ধুদের সাথে কিছু ভালো মুহূর্ত কাটানো। উৎসবের এই দিনটিকে আরও বিশেষ করে তুলতে ঈদের রান্নাবান্না এবং গল্পে-আড্ডায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটুক হাসি-আনন্দে।